বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিল্পীদের মধ্যে দুইটি দল বিভক্তি দেখা যায়। সরকার পতনের আগে তাদের একটি দল সক্রিয় ছিল শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আওয়াজ তুলতে, তাদের আন্দোলন দমিয়ে রাখতে। আর এ পরিকল্পনাগুলোর ছক কষা হচ্ছিল ‘আলো আসবেই’ নামের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। সম্প্রতি যার সকল কথোপকথন ফাঁস হয়েছে।
যেই গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও চিত্রনায়ক রিয়াজ।
ওই গ্রুপের বাকি সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী শামীমা তুষ্টি, তানভীন সুইটি, সোহানা সাবা, অরুণা বিশ্বাস, অভিনেতা সাজু খাদেমসহ আরও অনেকেই। সেই গ্রুপে তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর গরম পানি ঢেলে দেওয়ার মতো ভয়ংকর কথা উঠে আসে।
বিষয়টি অন্যান্য তারকাদের মাঝে বেশ উত্তেজনা সৃষ্টি করে। সামাজিক মাধ্যমে অনেক তারকাই সেই গ্রুপে থাকা অভিযুক্তদের নিয়ে নিন্দাও প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে আরও এক ভয়ঙ্কর তথ্য দিলেন অভিনেত্রী মনিরা মিঠু। তার দাবি, ‘ আলো আসবেই’ গ্রুপের মতো আরও একটি গ্রুপ আছে।
বুধবার সকালে এক ফেসবুক পোস্টে মনিরা লেখেন, ‘আলো আসবেই গ্রুপের মতো একটি গোপন গ্রুপ আছে। সেখানে তারা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে, শিল্প ও শিল্পীর ভালো মন্দ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। প্রায় ৮ মাস আগে বিঞ্জের একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিংয়ের সময় ড. এজাজ ভাই, আমি, শামিম আহমেদ, আমরা— অনেকেই একটা খুবই স্বাভাবিক হাস্যোজ্জ্বল ভিডিও করি এবং সেটা আমার পেজে আপলোড দিই। সেই ভিডিওর ভিউ হয় মিলিয়নের ওপরে।’
মনিরা আরও লিখেছেন, ‘কারণ এজাজ ভাই আর আমাকে দর্শক কানেক্টেড করতে পারে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের নাটকের সঙ্গে। আমাদের শিল্পী সংঘ থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয় সেই ভিডিওটি ডিলিট করে ফেলার জন্য। আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কেন? একজন বললেন যে, শিল্পী সংঘের সেক্রেটারি নাজনীন হাসান চুমকির নাকি সারারাত ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল যে, কীভাবে আমি এই অশ্লীল ভিডিও আপলোড দিলাম। কারণ ভিডিওর এক জায়গায় ড. এজাজ ভাই কমলা খাচ্ছিলেন আর ‘বিচি’ শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন। অ্যাক্টর ইকুইটির সেই গোপন গ্রুপের একজন সদস্য আমাকে কিছু স্ক্রিনশট পাঠান আমি যেন দ্রুত ভিডিওটি ডিলিট করি।’
মনিরা মিঠু লিখেছেন, ‘স্ক্রিনশটে দেখি সুজাত শিমুল আমাকে তুমুল গালাগাল করছেন। সারাজীবন মনে থাকবে সুজাত শিমুলের এই লাইনটি— এরা শিল্পী নামের বিষ্ঠা। মানে আমি আর কি। তিনি কবিতার মতো আরও অনেক গালাগাল দিয়েছিলেন আমাকে সেই গোপন গ্রুপে। আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে, শিল্পী সংঘের কোনো সিনিয়র সদস্য সুজাত শিমুলকে বলেননি যে, একটি ভিডিওর জন্য মিঠু আপাকে এভাবে গালাগাল করছো কেন? নাজনীন হাসান চুমকি তো আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারতেন যে, মিঠু আপা ভিডিওটি শ্রুতিমধুর না, মুছে ফেলেন। কারণ তার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের বিবাদ ছিল না।’
এই অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘শিল্পী সংঘের খুবই কনিষ্ঠ একজন সদস্য আমাকে সেই গোপন গ্রুপের স্ক্রিন শট পাঠিয়েছিলেন। আমাকে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওটির কমেন্ট চেক করি, দেখলাম কোথাও আমার পেইজের দর্শক এই ‘বিচি’ শব্দটির সঙ্গে কানেক্ট হননি। হয়তোবা আমার ও ডক্টর এজাজ ভাইয়ের ভক্তদের ‘কান’ শিল্পী সংঘের উচ্চপদস্থ পদ পাওয়া সদস্যদের ‘কান’-এর মতো এতো অশ্লীল নয়, এতো হিংসাত্মক নয়। আমি কিন্তু সেই ভিডিওটি ডিলিট করেছিলাম অপমানে, ঘৃণায়, লজ্জায়। কিন্তু আমি ভীষণ বোকা, সেই ভিডিওটি ডিলিট না করলে আমি অনেক টাকা পেতাম । কারণ সেই সময়ে আমি নিয়মিত পেজে ভিডিও দিতাম এবং সেটা আমার একটা আয়ের উৎস ছিল। কিন্তু আমার বিজ্ঞ আদালত সুজাত শিমুলের ফাঁসির আদেশ আর নাজনীন হাসান না ঘুমিয়ে স্ট্রোক করতে পারেন এই লজ্জায় আমি প্রায় ভিডিও দেওয়া বন্ধ করে দেই।’
তবে এই স্ট্যাটাসটির পর সেটি আর মনিরার টাইমলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় নি। যদিও পরে অভিনেত্রী আরও একটি পোস্ট লিখে জানিয়ে দেন যে, কেন বারবার তার পোস্ট মুছে যাচ্ছে বুঝতে পারছেন না।