মাথায় গুলি না করে অন্য কোথাও করতেন, অন্তত বাবুটা বেঁচে থাকতো

নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার সেই পতনের দিনও মানুষের ওপর নির্বিচারে চালানো হয়েছে গুলি। সেদিনই রাজধানীর উত্তরা বিএনএস ফুটওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকা সামিউ নূর নামে ১৩ বছরের এক শিক্ষার্থী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

তার এই মৃত্যুতে আহাজারি থামছেই না পরিবারেন। আক্ষেপ করে তাই শিশুটির মা বার বার বলে উঠছেন, আমার বাবুটাকে কেন মাথায় গুলি করা হলো? অন্য কোথাও করলে তো সে বেঁচে থাকতো!

আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় সংবাদ সম্মেলন শেষে মুখোমুখি হন শিশু সামিউ নূরের মা শাহনূর আক্তার। এ সময় তিনি বলেন, আমার বাবুটাকে কেন মাথায় গুলি করা হলো, অন্য কোথাও গুলি করলে তো সে হয়তো মারা যেতো না। পঙ্গু হয়েও যদি আমার বাচ্চাটা বেঁচে থাকতো, তাহলেও এতো কষ্ট ছিল না।

শিশু সামিউয়ের মা বলেন, আন্দোলনটা যদি শুরুতে শেখ হাসিনা মেনে নিত, তাহলে এই হত্যাকাণ্ডও হতো না, আমার আদরের সন্তানকেও হারাতে হতো না। আমি মনে করি এই হত্যাকাণ্ডের সকল দায় শেখ হাসিনার। তার ভুল সিদ্ধান্তেই এতগুলো মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বলেন, এই বাচ্চাগুলো তো শিক্ষার্থী ছিল, তারা তো সন্ত্রাসী ছিল না। তাহলে কেন গুলি করা হলো? গুলি না করে অন্যভাবেও তো এসব বাচ্চাগুলোকে সরিয়ে নেওয়া যেতো। কিন্তু তারা আমাকে সন্তান হারা করেছে, শত-শত মায়ের বুক খালি করেছে। আমরা জনসম্মুখে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

শাহনূর আক্তার বলেন, উত্তরা বিএনএসে শুনেছি ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন বাসার ছাদ থেকে গুলি চালিয়েছে। মারণঘাতী এসব অস্ত্র ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের হাতে কারা তুলে দিয়েছে? কাদের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে, কারা পেছন থেকে সহায়তা করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। আমরা শুনেছি এই অস্ত্রগুলো ভারত থেকে এসেছে, ভারত কেন সন্ত্রাসীদের হাতে এসব অস্ত্র তুলে দিয়েছে, তারও জবাব চাইতে হবে।

১৩ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে সামিউকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা আরও বলেন, আমাদের এখন একমাত্র চাওয়া শেখ হাসিনাসহ জড়িত সকলকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করা। আমার ছেলে তো আর ফিরে আসবে না, আমার আত্মাকে শান্তি দিতে হলে দ্রুততম সময়ে দোষীদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করুন।

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া ছাত্র জনতার আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এর আগে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করলে পুরো জুলাই মাসজুড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলন করতে থাকে।

গত ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এমনকি পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীদের ওপরও তারা দুই দফা হামলা করে। এর প্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে জোরদার হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন। এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান।

About admin

Check Also

দুই মাসেই দেউলিয়া হওয়ার পথে বাংলাদেশ : বাহাউদ্দিন নাছিম

বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *