দেশের চাহিদা না মিটিয়ে বিদেশে ইলিশ রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার নিষেধ করেছে। আগে দেশের মানুষ ইলিশ পাবে, পরে রপ্তানি—এমন নির্দেশনা দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, দেশবাসী ইলিশ পাবে না, আর বিদেশে রপ্তানি হবে এটা হতে পারে না। আগে দেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। এরপর রপ্তানি করা হবে।
এমন এক পরিস্থিতিতে এবার দুর্গাপূজায় ভারতে ইলিশ নিয়ে হাহাকার পড়েছে। এতে ভারতের মৎস্য ব্যবসায়ীরা ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
ইলিশ নিয়ে ভারতের এমন হাহাকারে বেকে বসেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ইলিশ যেন বর্ডার না পার হতে পারে তার জন্য নজর রাখছে বিজিবি সদস্যরা। এতেই বিপাকে পড়েছে চোরাচালানকারীরা। একের পর এক ধরা পড়ছে ইলিশ।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোরে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার সীমান্ত থেকে ভারতে পাচারের সময় ২৭৫ কেজি ইলিশ জব্দ করেছে বিজিবি। বাংলাবাজার বিওপির দায়িত্বপূর্ণ ঘিলাতলী নামক সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাছগুলো জব্দ করা হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘিলাতলী নামক স্থানে ১১ বক্স ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। চোরাকারবারিরা বিজিবি টহল দেখে মালামাল রেখে পালিয়ে যাওয়ায় অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
সুবেদার মো. আবুল বাশার আজাদ বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমরা খবর পাই ঘিলাতলী এলাকায় ইলিশ পাচার হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমাদের অভিযানে ২৭৫ কেজি বাংলাদেশি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। ইলিশগুলো স্থানীয় কাস্টমসে জমা করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে সীমান্তে। একই জেলার তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত দিয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে ভারতে পাচারের সময় ৪৬ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করেছে বিজিবি।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, লাউড়েরগড়ের শাহিদাবাদ এলাকা দিয়ে একদল চোরাকারবারি সীমান্ত পথ দিয়ে ভারতে ইলিশ মাছ পাচারের জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে সুনামগঞ্জ-২৮ বিজিবির অধীনস্থ লাউড়েরগড় বিজিবি সদস্যরা চোরাকারবারিদের পিছু নেন। একপর্যায়ে চোরাকারবারিরা বিজিবি সদস্যদের দেখতে পেয়ে দুটি ককশিট ভর্তি ইলিশ মাছ রেখে পালিয়ে যান।
লাউড়েরগড় বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার মুহিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, চোরাকারবারিরা বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়েই দুটি ককশিট ভর্তি ইলিশ মাছ শাহিদাদ এলাকায় রেখে পালিয়ে যান।
ইলিশ চেয়ে ভারতের চিঠি, যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভারতে আর ইলিশ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। বাংলাদেশের এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা বিপাকে ভারত। এ অবস্থায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ভারতের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সেই চিঠি ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে কাগজটা দেখেছি। এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা তো আর মাছ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিই না।
এর আগে, ‘ফিশ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি ভারতীয় রপ্তানি প্রতিষ্ঠান চিঠিতে লিখেছে, অত্যন্ত বিনয় এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে আপনাকে (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) জানানো যাচ্ছে যে, আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানি করে আসছি। প্রতি বছর আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার টন ইলিশ আমদানি করি।
এতে আরও বলা হয়েছে, দুর্ভাগ্যবশত, ২০১২ সালের জুলাইয়ে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সরকার ইলিশ মাছের রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে আমরা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
ভারতীয় রপ্তানি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তবে গত ৫ বছর (সেপ্টেম্বর ২০১৯ থেকে শুরু করে সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত), বাংলাদেশ সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং সময়ের জন্য শুধুমাত্র দুর্গাপূজার সময় ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে আমরা আপনার (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং দুর্গাপূজার জন্য ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
চিঠিতে সফলভাবে বাংলাদেশের শাসনভার গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।