কাঁধে থাকা ব্যাগে রয়েছে বই, খাতা, কলমসহ নানা শিক্ষা উপকরণ। সমাবেশে কয়েকজন শিক্ষার্থী পাশাপাশি বসে মনোযোগ দিয়ে শুনছে বক্তব্য। কথা বলে জানা গেল, তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। সকলে মিলে একসাথে যোগ দিয়েছে বিএনপির একটি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে প্রাইভেটে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানায় তারা।
হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতোই চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়েছে আরও অন্তত ৫-৭টি শিক্ষার্থীদের দল। তারা জানান, এলাকার বড় ভাইদের কথায় দল বেঁধে যোগ দিয়েছে জেলা বিএনপির সমাবেশে। বিক্ষোভ সমাবেশে থাকা অন্তত ৮ শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি, ছাত্রদল বা এর সহযোগী কোন সংগঠনের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম জানায়, একই ক্লাসে পড়ি এমন ৪ জন বন্ধু মিলে সমাবেশে এসেছি। পিঠে থাকা ব্যাগে বই, খাতা, কলম রয়েছে। সমাবেশ শেষ করে একটি প্রাইভেট আছে সেখানে যাব। এর আগে কোনদিন এমন সমাবেশে আসেনি বলে জানায় সিয়াম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুর শেখপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র আসলাম আলী জানায়, সহপাঠী মনিরুল তাকে ঢেকে নিয়ে এসেছে বিএনপির সমাবেশে। এবিষয়ে মনিরুল জানায়, এলাকার এই বড় ভাই তাদেরকে নিয়ে এসেছে। তবে সমাবেশে আসার আগে জানতো না কোন দলের সমাবেশে আসছে তারা।
সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণীর ছাত্র সাব্বির রহমান জানায়, তাদের এলাকার অনেক ছেলে এই সমাবেশে এসেছে। তাই সবার সাথে এসেছি। কি নিয়ে সমাবেশ, কেন সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে, এসবের কিছুই জানি না। এসে দেখি সমাবেশে অনেক লোকজন রয়েছে।
গোমস্তাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র নিরব জানায়, আমি একায় নয়, আমার ক্লাসের আরও ৫ জন এসেছে এই সমাবেশে। বাড়িতে জানে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়, বাসায় না বলেই সমাবেশে এসেছে তারা। কারন বাসায় জানতে পারলে আসতে দিতো না।
দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। জেলা বিএনপির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে জেলা বিএনপির আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা শহরের সোনার মোড়ে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা বিএনপির সিনিয়র আহ্বায়ক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম টিপুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, জেলা মহিলা দলের সভাপতি সিদ্দিকা সিরাজুম মুনিরা, জেলা বিএনপির সদস্য ইয়াজদানি জয়ার্জ, ভোলাহাট উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল কাদের, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওবায়েদ পাঠান, ভোলাহাট উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহনাজ খাতুনসহ অন্যান্যরা।
এবিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বাবা-দাদাদের সাথে অনেক শিশুই সমাবেশে আসে। তাছাড়াও অনেক শিশু শখ করে সমাবেশে আসতে পারে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রশিদ জানান, বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বই-খাতা নিয়ে কোন রাজনৈতিক সমাবেশে গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বিদ্যালয়ে পাঠদান চলার পর শিক্ষার্থীরা যেই বয়সেরই হোক না কোন, যেকোন জায়গায় বা যেকোন রাজনৈতিক সমাবেশে যেতে পারে। এতে আমাদের কোন করনীয় নেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) আলমগীর জাহান মুঠোফোনে বলেন, সমাবেশে পুলিশ শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে বিষয়গুলো দেখে থাকে। সমাবেশে যদি কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেক্ষেত্রে পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে আয়োজকরা কাদেরকে নিয়ে সমাবেশ করছে, এতে আমাদের কোন করনীয় নেই।
খুলনায় গয়েশ্বরের অবস্থানরত বাড়িতে অভিযান, আটক ১৩
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে খুলনায় এসেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। রাতে নগরীর বসুপাড়া এলাকার সাবেক এক বিএনপি নেতার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গয়েশ্বরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে আসা ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন গণমাধ্যমকে জানান, খুলনার গণসমাবেশের সমন্বয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের বাসভবনে যান। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে আটক করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, হাতে লাঠি, কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে কয়েকজন বাড়িতে প্রবেশ করে ত্রাস সৃষ্টি করে। এরা পুলিশ কি না বোঝার উপায় নেই। তারা ১৩ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে। নগরের সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) মমতাজুল হক বলেন, বিভিন্ন স্থানে ওয়ারেন্টের আসামি ধরা হচ্ছে। কোন এলাকা থেকে কাকে ধরা হয়েছে তা সকালে বলতে পারবো।
খুলনা মহানগরের সোনালী ব্যাংক চত্বরে আগামী শনিবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কর্মসূচি সমন্বয় করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
খুলনায় বাসের পর এবার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ, চরম ভোগান্তি
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে খুলনায় বাস চলাচল বন্ধ হওয়ার পর এবার লঞ্চ চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডেকেছেন জাহাজ শ্রমিকরা। আজ শুক্রবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে হঠাৎ করে পূর্ব নোটিশ ছাড়াই লঞ্চ ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
ধর্মঘটে থাকা শ্রমিকরা জানান, লঞ্চ শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি, ভৈরব থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত নদী ড্রেজিং, ভারতগামী জাহাজকে ল্যান্ডিং পাস দেওয়াসহ ১০টি দাবিতে যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকরা ধর্মঘট করছেন। শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে খুলনা থেকে কোনো লঞ্চ ছাড়ছে না। তবে মালবাহীসহ অন্যান্য লঞ্চ ও নৌযান চলাচল করছে।
তবে বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শনিবার বিএনপির খুলনা বিভাগীয় জনসভাকে ব্যাহত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় লঞ্চ হরতাল ডাকা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, ১০ দফা দাবিতে তারা যাত্রীবাহী লঞ্চে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট শুরু করেছেন। এর ফলে ২টি রুটে ৬টি লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, আগামী ২২ অক্টোবর খুলনার সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। এই গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের আসা ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে বাস মালিক সমিতি এই ধর্মঘট ডেকেছে।