রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। রোববার (২৫ আগস্ট) রাতে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক) নিয়ে আসা হয়েছে।
এ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ছাড়াও সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে সেনাবাহিনী।
জানা গেছে, আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তাদের প্রায় সবারই মাথায় আঘাত রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, রাত পৌনে ৯টা থেকে আহতরা হাসপাতালে আসা শুরু করে। জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে।
এর আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম নিজেদের ফেসবুক পোস্টে তাদের আটকে রাখার বিষয়ে জানালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমা হতে থাকে। পরে রাত ৯টার দিকে তারা সচিবালয়ের উদ্দেশে যাত্রা করে।
দুই সমন্বয়কের পাশাপাশি আনসার সদস্যদের আন্দোলনের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভা কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। তাদের অনেকেই এখন ক্ষুধায় কাতর। বের হওয়ার জন্য এক গেট থেকে অন্য গেটে ছুটলেও বের হতে পারেননি।
আনসারদের সঙ্গে ছিল ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ, দাবি আহত শিক্ষার্থীদের
দেশের ১১টি জেলা যখন বন্যায় ভাসছে, তখন তাদের সহযোগিতায় ব্যস্ত শিক্ষার্থী, জনতা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা; ব্যস্ত সময় পার করছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও। এমন এক সময় আজ রোববার (২৫ আগস্ট) ত্রাণের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় আনসারদের। সে সময়ই শিক্ষার্থীরা দাবি তোলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। আর তারপর কর্মসূচি প্রত্যাহারের তথ্য পাওয়া গেলেও দেখা গেছে, আনসার সদস্যরা সচিবালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আটকে রেখে বিক্ষোভ করতে।
একপর্যায়ে তারা হামলে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। খবর পেয়ে কয়েক মিনিটেই দখলে নেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এ সময়ে আহত হন বেশ কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, হামলা শুধু যে আনসার সদস্যরা করেছেন তা নয়, তাদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনেকে। শিক্ষার্থীদের স্রোত দেখে তারা পালিয়ে যান।
সচিবালয়, প্রেসক্লাব এলাকায় থাকা আহত শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, তারা নিরস্ত্র ছিলেন। হাতে লাঠিও ছিল না। প্রথম দিকে অল্প সংখ্যক একত্র হয়ে তারা যখন আসছিলেন, তাদের পথ রোধ করা হয়। বেধরক পেটানো হয়। সে সময় তারা মূল এলাকায় পৌঁছাতে পারেননি। তাদের ওপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পেটুয়া বাহিনীও চড়াও হয়। এ সময় দূর থেকে গুলির আওয়াজও শুনতে পান এসব শিক্ষার্থী। যদিও গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত পাননি তারা।
শিক্ষার্থীরা নানা সচিবালয়ের চারদিকের এলাকা দখল করে রেখেছেন। আওয়ামী বিরোধী নানা স্লোগানে উত্তাল এখন ওই এলাকা। তাদের অনেকে বলেন, এই আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ দেশকে কখনও শান্তিতে থাকতে দেবে না। দেশের মানুষকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে। তারা এবং তাদের দোসররা দেশের শত্রু। দেশের শত্রু স্বৈরাচার হাসিনা শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।