বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বর্তমানে আমরা যেটা ফেস করছি, সবাই আমাদের সন্দেহ করছে। কেন সন্দেহ করছে, কারণ আমরা যে ফরমেটে রয়েছি, এই ফরমেটে অতীতে যারা ছিল, তারা এই সুযোগটাকে ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে ক্যাশ করার চেষ্টা করেছে বা ক্যাশ করেছে। যে কারণে মানুষের একটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে।’
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘এতবছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকার থাকার একটা প্রভাব আমাদের মধ্যে রয়েছে। আমরা এখন ক্ষমতাকে ভয় পাই। সবাই মনে করে ক্ষমতায় যে যায়, সে রাবণ হয়। আমি মনে করি, কোথাও না কোথাও আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
আমি যদি সব ফর্মের ক্ষমতাকে ডিসওন করা শুরু করি তাহলে পরিবর্তন কাদের মধ্য দিয়ে আসবে? কোনো একটা ক্ষমতার ওপর তো আমাদের নির্ভর করতেই হবে। কোথাও না কোথাও তো আমাকে নোঙর ফেলতেই হবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব, গণমাধ্যমকর্মী ও উপস্থাপক ফারাবি হাফিজ, তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, রম্যলেখক ও গণমাধ্যমকর্মী শিমু নাসের প্রমূখ।
পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে মার্কিন সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সফররত উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ সহায়তা চান।
২০০৬ সালে নোবেল শান্তি বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জসমূহ উল্লেখ করে জানান, তার সরকার দ্রুততার সঙ্গে অর্থনীতি পুনর্গঠন, সংস্কার ও পুনরায় সচল করার পাশাপাশি আর্থিক খাতে সংস্কার এবং বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগঠিত বিপ্লব সম্পর্কে বলেন, এই বিপ্লব বাংলাদেশে নতুন আশা জাগানিয়া যুগের সূচনা করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রতিনিধিদলের কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরে বলেন, এ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভোট কারচুপি প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশন সংস্কার এবং বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করেছে।
স্বৈরাচার সরকারের ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের দ্বারা আত্মসাৎকৃত ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্নীতির মতো বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা দুর্নীতির এক গভীর সমুদ্রে নিমজ্জিত ছিলাম।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে।
বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিকখাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ এবং মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক জেরড ম্যাসন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোরশেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শহারিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।