মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে বিগত সরকারের আমলে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এ সময় ছাত্রদের আত্মত্যাগ নিয়ে মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নির্ধারিত সভাকক্ষে বৈঠকটি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পোস্টে বলা হয়েছে, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বিগত সরকারের আমলে সকল ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা জো বাইডেনকে জানান। অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, দেশ পুনর্গঠনে তার সরকারকে অবশ্যই সফল হতে হবে। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে কোনো সাহায্যে বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তাহলে আমাদেরও (যুক্তরাষ্ট্র সরকার) উচিত পূর্ণ সহযোগিতা করা।
এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জুলাই বিপ্লব চলাকালীন ও এরপরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি-সংবলিত ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ শীর্ষক আর্টবুক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে উপহার দেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৯তম অধিবেশনে যোগদান করায় শুভেচ্ছা জানিয়েছে জাতিসংঘ। প্রধান উপদেষ্টা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এ সফর করছেন যখন বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করছে।
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) শেয়ার করা ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুইন লুইস এক বার্তায় বলেন, এ বছর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হওয়ার ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন করছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ায় আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর ভাষণ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী এমন এক চ্যাঞ্জেলের মুখে রয়েছি যা আগে কখনো দেখিনি। বৈশ্বিকভাবেই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যুদ্ধ বেড়েই চলছে এবং তা শেষ হওয়ার কোনো উপায় দেখছি না।
মঙ্গলবার শুরু হওয়া জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বিশ্ব নেতারা এমন এক সময় জড়ো হচ্ছেন, যখন ইউরোপ, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া রয়েছে গাজা যুদ্ধ এবং ইউক্রেন ও সুদানে সংঘাত। আশা করা হচ্ছে এ অধিবেশনে বিশ্বনেতারা যুদ্ধ বন্ধে তাদের কণ্ঠ জোরালো করবেন।
জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘে এটি তার চতুর্থ এবং শেষ ভাষণ। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এ ভাষণে বাইডেন বর্তমান বৈশ্বিক সংকট তুলে ধরবেন।
ইউএনজিএতে অংশগ্রহণ উপলক্ষে ড. ইউনূস এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে এটি ড. ইউনূসের প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে সোমবার নিউইয়র্কে পৌঁছান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে নিউইয়র্কের নির্ধারিত হোটেলে গিয়ে উঠেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেছে, হোটেলের লিফটে ওঠার আগে প্রফেসর ইউনূসকে প্রশ্ন করার চেষ্টা করেন ভারতীয় সাংবাদিকরা। ওই সময় কয়েকজন সাংবাদিক তার কাছে পৌঁছে যান। তখন তাদের ঠেলে দূরে সরিয়ে দেন এক নিরাপত্তারক্ষী।
এএনআই বলছে, ভারতের ওই সাংবাদিকরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রশ্ন করার চেষ্টা করলেও তিনি তাদের এড়িয়ে যান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতিসংঘ সফর কাভার করতে ওই সাংবাদিকরা সেখানে গেছেন।
তবে এএনআইয়ের ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে কোনও সাংবাদিকের প্রশ্ন শোনা যায়নি। দুই সাংবাদিকের মধ্যে একজনকে কেবল ‘ড. ইউনূস, ড. ইউনূস’, আরেকজনকে ‘ইউনূস স্যার, ইউনূস স্যার’ বলতে শোনা যায়। ওই সময় প্রফেসর ইউনূস লিফটে করে চলে যান।
ভারতীয় এই বার্তা সংস্থা বলেছে, ড. ইউনূস নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থকরা সেখানে বিক্ষোভ করেছেন। তারা শেখ হাসিনার পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর আগে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতিসংঘের অধিবেশনে এবারই প্রথম যোগ দিয়েছেন তিনি। অধিবেশনের ফাঁকে তিনি পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে তার।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা, সম্পদের অবৈধ পাচার রোধ, অভিবাসী অধিকার রক্ষার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। সফর শেষ করে ওইদিন রাতেই তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
সূত্র: এএনআই।