কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর না কমায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুর থেকে দেড় ফুট করে খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা এখন একেবারেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৮.৯২ এমএসএল (মিনস সি লেভেল) রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপৎসীমার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এর আগে, সোমবার সকাল ১০টায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১০৮.৮৪ এমএসএল। কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল।
কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আবদুজ্জাহের বলেন, দেড় ফুট করে গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে পানি নিস্কাশন হচ্ছে ৩০ হাজার কিউসেক। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু রেখে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এতে পানি ছাড়া হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে ৩২ হাজার কিউসেক পানি।
বন্যায় এখন পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু
দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৭ জন। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এসব তথ্য জানান।
ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। পানিবন্দি পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। ৭৪ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫৪১টি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যায় মোট ২৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১০ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে ৫ জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ৫ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন।
ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি
ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দিলেও এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৯টি গেট খুলে দেওয়ারয় নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের যা জানা আছে, নতুন কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি।
ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সবাইকে সমন্বিত করে ত্রাণের কাজ করছে। যে স্থান থেকে পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে যে সমস্ত জায়গায় ত্রাণ পরিবহন করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আরো দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে। এখন পর্যন্ত দূরবর্তী সব উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। উপজেলা স্তরে ত্রাণ মজুদ করা গেছে এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা গেছে। ক্রমান্বয়ে এগুলো ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে।
ফারুক-ই-আজম বলেন, দুর্গম এলাকা এখন আর নেই। সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছি। অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলো রানিং পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি। ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। জনগণের স্বেচ্ছাসেবা ও মানুষের উদ্যম আমাদের শক্তি যোগাচ্ছে।