ফেনীতে প্রবল বন্যার মধ্যে কয়েক জায়গায় লাশ ভেসে আসতে দেখেছেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে দুটি লাশ কলার ভেলায় করে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে।
সেই দুটি লাশের সঙ্গে চিরকুট দেয়া হয়েছে। চিঠির ভাষ্য, বন্যার মধ্যে মাটি না পেয়ে কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়। কেউ লাশ পেলে যেন কবর দেয়া হয়- সেজন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে ফেনীর জেলা প্রশাসক মুসাম্মৎ শাহীনা আক্তার রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে জানান, জেলা প্রশাসনের কাছে বন্যায় একজনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।
গত ২০ অগাস্ট দুপুর থেকে ফেনীতে বন্যা শুরু হয়। পরদিন ২১ অগাস্ট দুপুর থেকে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। জেলার পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা শুরুতে বন্যা কবলিত হলেও যা পরে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞা ছড়িয়ে পড়ে। বন্যায় জেলায় প্রায় ১০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর মধ্যে শনিবার (২৪ আগস্ট) রাতে ফেনী শহরের মিজান রোডে সোনালী ব্যাংকের সামনে হাঁটু পানিতে একটি মরদেহ ভেলায় ভাসতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে সেখানে লোকজন ভিড় জমান। পরে কয়েকজন মানুষ সেই লাশটির জানাজা ও দাফনের জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু কোথায় সেটি দাফন করা হয়েছে তা আর জানা যায়নি। পরদিন রোববার (২৫ আগস্ট) ফেনী সদর উপজেলার লালপোল এলাকার উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামে বন্যায় ভেসে আসে এক শিশুর লাশ। তা দেখে স্থানীয়রা সেখানে যান।
ফেনী জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক আ ন ম আব্দুর রহিম বন্যার মধ্যে দুটি লাশের তথ্য দিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, সদরের মৌটবী ইউনিয়নের সাতসতী গ্রামের নুরুল আলম শনিবার মারা যান। পরে তার মরদেহ পরিবারের সদস্যরা কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেন। একই দিন তিনি সদরের কালীদহ রেললাইনের পাশে একটি অর্ধগলিত মরদেহ ভাসতে দেখেছেন।
ওমান প্রবাসী মাসুদ খান প্রিন্স এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, তার বাবা আলীম উল্লাহ (৭৩) মারা যাওয়ার পর লাশ কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি সদর উপজেলার মোটবী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাতসতী গ্রামের নাছির ভূঁইয়া বাড়ির বাসিন্দা।
প্রবাসী মাসুদ খান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমার বাবাকে গতকাল (২৩ আগস্ট) বিকেলে কলাগাছের ভেলা দিয়ে বন্যার পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আপনারা যারা ওইখানে উপস্থিত ছিলেন কিভাবে পারলেন এটা। দরকার হলে বাইরে ভেলাতে রেখে আরেকটা দিন অপেক্ষা করতেন। কেউ বোট বা কোনো উদ্ধার কর্মী আসেনি, একটা বোট নিয়ে কেউ আসলে আমার বাবাকে ফ্রিজিং করে রাখা যেত। মনের ভেতর আগুন জ্বলছে কিভাবে কোথায় আছে? আল্লাহ আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করো।’
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল 24 এর সাংবাদিক ফারাবি হাফিজ তার ফেসবুকে একটি লাশের তথ্য জানিয়েছেন। ত্রাণ বিতরণের একটি ভিডিওতে তিনি দেখান ফেনী সদর উপজেলার একটি গ্রামে বন্যার পানিতে মরদেহ ভাসছে। তিনি সেখানে লিখেন, ‘কলার ভেলায় মরদেহ ভাসছে। প্লাস্টিকে লেখা, মুসলিম মহিলা। পারলে জানাজা পড়ে দিয়েন।’
উল্লেখ্য, ফেনী শহরে, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায় পানি কমছে। তবে ফেনী সদর, সোনাগাজী ও দাগনভূঞাতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি।