ছাত্র-জনতার রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচার শাসনের অবসান হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান। শেখ হাসিনার পতন ও ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশের ১ মাস পূর্ণ হলো আজ।
আজকের দিনটি সবাই স্মরণীয় মনে করছেন এবং দিনটিকে ঘিরে সবাই নিজের স্মৃতিচারণ করছেন। মূলত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার লংমার্চকে ঘিরে শেখ হাসিনার পতন হলেও এই লং মার্চ ৬ আগস্ট পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রথমে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তা ৫ মার্চ ঘোষণা করা হয়। এদিনই পতন হয় শেখ হাসিনার।
শিক্ষার্থীদের লং মার্চ একদিন এগিয়ে আনার এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সময়ের জনপ্রিয় ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। এবং এই সিদ্ধান্তকে তিনি সেরা সিদ্ধান্ত বলেছেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের সেরা সিদ্ধান্ত ছিলো— ‘পরশু নয়, কালকেই লং মার্চ টু ঢাকা’।
প্রঙ্গত, জুলাইয়ের শুরুতে— সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের সঙ্গে তুলনা করে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। তার এমন মন্তব্যে রাজপথে অভিনব প্রতিবাদ করেন শিক্ষার্থীরা। শির্ক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ভাষা না বুঝে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। পিটিয়ে রক্তাক্ত করে নারী শিক্ষার্থীদেরও। সেই হামলাই গণবিস্ফোরণের বীজ বপন করে দেয়।
এরই ফলে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
বন্যা দুর্গতদের জন্য খরচের হিসাব দিলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাইখ আহমাদুল্লাহ বন্যার্তদের জন্য ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ খরচের কথা জানান। সেখানে ৩১ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২২৫ টাকার ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
পোস্টে তিনি লেখেন, ‘বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের প্রথম ধাপে খাদ্যসামগ্রীসহ নানাবিধ ত্রাণসামগ্রী ক্রয়ের কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। বিতরণও সম্পন্ন হয়েছে অর্ধেকের বেশি। তারই বিস্তারিত খরচের হিসাব এখানে দেওয়া হলো।
শনিবার থেকে শুরু হবে পুনর্বাসনের যাচাই বাছাইয়ের পর্ব। এ কার্যক্রম চলবে কয়েকমাস ধরে। পুনর্বাসনের প্রতিটি ধাপ শেষে এর বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হবে। আর বছর শেষে অডিট তো থাকছেই।
আনন্দের বিষয় হলো, আমাদের ত্রাণ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা খরচ ১ শতাংশেরও কম, সেবামূলক কাজের ইতিহাসে যা আমাদের জানা মতে এক বিরল ঘটনা।’
শায়খ আহমাদুল্লাহ জানান, বন্যা দুর্গত অঞ্চলে এখনও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। সেখানকার ত্রাণ পরিবহন, স্বেচ্ছাসেবকদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত এবং ঢাকায় স্বেচ্ছাসেবকদের খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির হিসাব প্রকাশিত তালিকায় সংযুক্ত হয়নি। চূড়ান্ত হিসাবে সেসবও যুক্ত করা হবে।
সব ধর্মের মানুষের দুর্ভোগ-দুর্যোগে পাশে দাঁড়াব: শায়খ আহমাদুল্লাহ
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ নির্বিশেষে সব ধর্মের মানুষ আমরা একসঙ্গে বসবাস করছি। তারা তাদের ধর্ম পালন করছেন, কিন্তু মানুষ হিসেবে তাদেরও দুর্ভোগ-দুর্যোগ ও কষ্টে আমরা পাশে রয়েছি। ইসলাম আমাদের সে কথাই বলে। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবেন, কোনো প্রকার ভেদাভেদ করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালের দিকে ফেনীর ফুলগাজীতে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১ লাখ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, এখানে বন্যার্তদের জন্য প্রথমে শুকনো খাবার, পরে চাল-ডালসহ ১৭ কেজির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটি প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। আজকে আমরা ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। এটি এখানেই শেষ নয়, আরও চলতে থাকবে।
তিনি বলেন, বন্যা চলে গেলেও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কোথাও যায়নি। বন্যাকবলিত হয়ে যারা কষ্টে আছেন, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে আমরা ত্রাণের চাল পৌঁছাব। এজন্য বলব, বন্যা চলে গেছে, কিন্তু আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন আপনাদের পাশেই আছে। আগামীতে আরও বেশি করে থাকব ইনশাআল্লাহ।
ত্রাণ কার্যক্রম শেষ হলে পুনর্বাসন শুরু হবে উল্লেখ করে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, আমাদের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হলে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হবে। বন্যায় যারা ঘরহারা হয়েছেন, ঘর মেরামতের জন্য টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে। যারা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন, কিন্তু বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকেও সহায়তা করা হবে। এ ছাড়া বন্যায় যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে স্থায়ী একটি ইনকামের বন্দোবস্ত আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে করে দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ।
এদিন ফুলগাজী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও পরশুরামের সুবার বাজার ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা মাঠে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। একই সময় সহায়তার অংশ হিসেবে রকমারি ডটকমের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের বৈদ্যুতিক সমস্যা নিরসনে সোলার প্রদান করা হয়।
এ সময় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের জেনারেল সেক্রেটারি সাব্বির আহমেদ, মাদরাসাতুল হিদায়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলীসহ স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বন্যা শুরুর পর থেকে ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪২ হাজার ২৫৫টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, চাল-ডালসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।