৫ আগস্ট কীভাবে সেনাপ্রধানের দাওয়াত পান, জানালেন ডা. শফিকুর

গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেদিন দুপুরেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মাঠে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান। তাতে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। অথচ তখনো হাসিনা সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ ছিল সংগঠনটি।

এ নিয়ে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে নিজ দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। এই আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক সিইও খালেদ মুহিউদ্দীন।

সেনাপ্রধান কখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন— এমন প্রশের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্ট দুপুরে ফোন আসে সেনাবাহিনী থেকে। এর আগে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এমনকি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সেদিনই প্রথম সরাসরি দেখা হয়, দাবি করেন জামায়াত প্রধান।

একটি ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠনের নেতাকে সেনানিবাসে যেতে বলা হচ্ছে, বিষয়টি তো ফাঁদও হতে পারত, এমন শঙ্কা ছিল কি না- জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আমি মনে করিনি। সরকার হঠাৎ করে পয়লা আগস্ট আমাদের যখন নিষিদ্ধ করে, আমরা সেটা গ্রহণ করিনি, সঙ্গে সঙ্গে বর্জন করি। সবাই আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সবাই নিন্দা করেছে। কারণ এটা ছিল ইস্যু ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কৌশল। এটা কেউ গ্রহণ করেনি। কাজেই সেনাপ্রধানের দাওয়াত আমরা অস্বাভাবিক মনে করিনি।’

আ.লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা: সোহেল তাজ

শেখ হাসিনা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল।

সোমবার সাংবাদিক কনক সারোয়ারের ইউটিউব চ্যানেল কনকসারোয়ারনিউজে এক আলাপচারিতায় অংশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সোহেল তাজ।

সোহেল তাজের কাছে কনক সারোয়ার জানতে চান যে, দায়িত্ব নেওয়ার পাঁচ মাসের মাথায় কেন তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন? জবাবে সোহেল তাজ বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি ইন্সপায়ার্ড ছিলাম যে বাংলাদেশে একটি গুণগত চেঞ্জ আসবে। একটা সিস্টেমিক চেঞ্জ আসবে। আমি সেই বিশ্বাস থেকে ইলেকশন করেছিলাম। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, বাট আই ফিল কমপ্লিটলি বিট্রেইড। আমি আস্থা রেখেছিলাম আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ওপর। শি বিট্রেইড মি, শি বিট্রেইড দ্য পার্টি, আওয়ামী লীগ, শি বিট্রেইড বাংলাদেশ। বিকজ আমরা যে দিনবদলের সনদ, যেটা আমরা মানুষের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম করব সেটা করতে হলে প্রথম ছয়মাসেই সেই চিত্র পাওয়া যেত। কিন্তু আমরা তো সেদিকে যাইনি, বরং গতানুগতিক পলিটিক্যাল কালচার মেইনটেন করে আমরা সেটাকে আরও ধ্বংসের পথে…।

এছাড়াও এক ঘণ্টা ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের দীর্ঘ আলাপচারিতায় সোহেল তাজ নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

কথা বলেছেন জেলহতা নিয়ে, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, ক্ষমতার বাইরে থাকলে এক হাসিনা, ক্ষমতায় গেলে হাসিনার বদলে যাওয়া, জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যার পরও নিজের বোনের আওয়ামী লীগে থাকা এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা প্রসঙ্গে সোহেল তাজ বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে না; হত্যা, গুম-খুন-দুর্নীতির সঠিক বিচার হলে এমনিতেই আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।

২৮ লাখ টাকার ঘড়ি পরতেন ওবায়দুল কাদের

মানুষের অনেক কিছুর প্রতিই আকর্ষণ থাকে। কারো থাকে দামি খাবারের প্রতি, কারো আবার দামি গাড়ি-বাড়ি কিংবা রাজ্য শাসনের লোভ। এমনই একটি লোভ আঁকড়ে ধরেছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে।

তিনি ছিলেন ঘড়ি লোভী। বিশ্বের দামি দামি ঘড়ি উপহার পেতেই যত লোভ করেছিলেন। মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারদের কাছ থেকে তিনি উপহার হিসেবে ঘড়ি নিতেন। বিনিময়ে বড় বড় প্রজেক্টে কাজ দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পেশা ছিল লেখক ও সাংবাদিকতা। লেখালেখি থেকে তার আয় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার আইনজীবী স্ত্রীর আয় ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক যুগ পরে এসে তার বাৎসরিক আয় দাঁড়ায় ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা। পরিবর্তন হয় চালচলন ও পোশাকের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। ক্ষমতায় থাকাকালে পরতেন নামিদামি অনেক ব্র্যান্ডের ঘড়ি। তার মধ্যে ওবায়দুল কাদেরের হাতে দেখা গেছে, রোলেক্স ডে ডেট প্রেসিডেন্ট ঘড়ি, দাম ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা; লুই ভিতন জিএমটি ভয়েজার (পিঙ্ক গোল্ড সংস্করণ), দাম ১২ লাখ ৭২ হাজার টাকা; রোলেক্স ডেটজাস্ট, দাম ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা; উলিস নাদা এক্সেকিউটিভ ডুয়াল টাইম, দাম ১০ লাখ ১৬ হাজার ২০০ টাকা; রোলেক্স সেলিনি (হোয়াইট গোল্ড), দাম ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ও রোলেক্স ডেটজাস্ট (ডায়মন্ড ডায়াল), দাম ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

এসব ঘড়ির ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, এটা একেবারে ফর গডস সেক, আমি বলছি এগুলো আমার দামি পোশাক, এগুলো আমার কেনা না। আমি পাই, হয়ত আমাকে অনেকে ভালোবাসে, আমার অনেক কর্মী আছে, তারা বিদেশে আছে, আসার সময় স্যুট নিয়ে আসে। সিঙ্গাপুর থেকে একজন তিনটা কটি বানিয়ে নিয়ে এসেছে, এরকম এখন আপনি যদি নিয়ে আসেন, আমাকে উপহার দেন, আমি কি করব? এটা গিফট আইটেম!

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা। পৈতৃক সূত্রে তিনি ৬০ শতাংশ কৃষিজমির মালিক। তবে ১৫ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট ইশরাতুন্নেছা কাদেরের অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে একই সমান্তরালে। নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া চারটি হলফনামা থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ ছিল ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২২ টাকা। ১৫ বছর পর ২০২৩ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং স্ত্রীর ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ টাকা।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, তার পেশা ছিল লেখক ও সাংবাদিকতা। লেখালেখি থেকে তার আয় ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তার আইনজীবী স্ত্রীর আয় ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের হলফনামায় দেখানো হয়, বাৎসরিক আয় ৩৮ লাখ ৭ হাজার ৫০৮ টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া থেকে ১৪ লাখ ২৪ হাজার ৯২৪ এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানত থেকে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৮৪ টাকা। এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে বেতন-ভাতা ১২ লাখ ৬০ হাজার এবং বই লিখে আয় ৪ লাখ ২৫ হাজার ৩০০ টাকা। তার ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের আয় ১২ লাখ ২৩ হাজার ৫১২ টাকা।

অভিযোগ সূত্র মতে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতি মাসেই হাতঘড়ি পরিবর্তন করতেন। প্রতিনিয়ত তিনি নতুন নতুন ঘড়ি পরে হাজির হতেন মিডিয়ার সামনে। দলের নেতাকর্মীরা এটি নিয়ে সরাসরি কথা বলার সাহস না পেলেও পেছনে অনেক সমালোচনা করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের বিনিময়ে টেন্ডার পাস করে দেওয়ার বিনিময়ে মন্ত্রী কাদের বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের খুবই দামি একটি হাতঘড়ি উৎকোচ হিসেবে নিতেন। একেক ঠিকাদার থেকে একেক কোম্পানির হাতঘড়ি চাইতেন। আবার অনেকে ওবায়দুল কাদেরের ঘড়ির প্রতি লোভ কাজ ভাগিয়ে নিতে কাজে লাগাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশনে ওবায়দুল কাদের ২০১৮ সালে যে হলফনামা দাখিল করেছেন সেখানে তিনি তার আয়কর সনদও দিয়েছিলেন। তাতে দেখা যায়, তার মোট বাৎসরিক আয় ছিল ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৬৫১ টাকা। আর মধ্যে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা তিনি মন্ত্রীর বেতন-ভাতা হিসেবে পেয়েছেন আর ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫১ টাকা পেয়েছেন বই লেখার রয়্যালটি বাবদ।

অন্যদিকে তার একটি রোলেক্স ডে ডেট ঘড়ির দামই ২৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আবার তার দাখিল করা হলফনামা বা আয়কর সনদে এই দামি হাতঘড়িটির বা অন্য ঘড়িগুলোর কোনো উল্লেখই নেই, যার মাধ্যমে নির্বাচনী বিধিমালা আর আয়কর আইনের লঙ্ঘন করেছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনের হলফনামায় লুকিয়ে ছিলেন শখের হাতঘড়িগুলো।

এদিকে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের আর কোনো খোঁজ মিলছে না। যিনি প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে কথা না বলে থাকতে পারতেন না, তিনিই এখন আত্মগোপনে।

About admin

Check Also

দুই মাসেই দেউলিয়া হওয়ার পথে বাংলাদেশ : বাহাউদ্দিন নাছিম

বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *