কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের ‘নাতি-পুতি’ বলে আখ্যা দিয়ে কড়া মন্তব্য করেছিল শেখ হাসিনা। তার এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তখন ১৪ জুলাই- রাত ১০টা, সাবেক এ স্বৈরশাসকের মন্তব্যের প্রতিবাদে রাজপথে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী। তাদের মুখে স্লোগান ছিলো ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’।
এরপর থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের পালে হাওয়া লাগে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে গণঅভ্যুত্থানের শিকার হয় আওয়ামী লীগ সরকার। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। যেদিন থেকে আন্দোলন প্রখর হয়, সেই দিনটির ২ মাস পর ফের একই স্লোগান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হবেন শিক্ষার্থীরা।
১৫ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপে এমন ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া এলাকায় জড়ো হওয়ার ঘোষণা দেন তারা। ঢাবি শিক্ষার্থী মো. রিয়াজ উদ্দিন সাকিব গ্রুপে বলেন, আজ রাত ১০টায় ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানে ফের প্রকম্পিত হবে ঢাবি ক্যাম্পাস।
মো. মুজাহিদ খান বলেন, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ এই স্লোগানই ছিল শক্তি। ব্যস! আজ রাতে হলপাড়া থেকে এই স্লোগান নিয়ে মিছিল বের করা হবে।
গত ১৪ জুলাই এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না? তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে? এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর তা সারাদেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
ঢাবিকে হারিয়ে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন জবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতিবিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৪ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (জেএনইউডিএস)।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সাভারের সিসিডিবি হোপ সেন্টারে তারুণ্যের যুক্তিনির্ভর নেতৃত্বে দুর্নীতিবিরোধী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বৈষম্যহীন “নতুন বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে আয়োজিত টিআইবির এবছরের বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নসহ রানারআপ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি।
এছাড়া প্রতিযোগিতায় সেরা বিতার্কিক হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইন আল মুবাশ্বির এবং ফাইনালের সেরা বিতার্কিক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাগীব আনজুম।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে গত বিশ বছর ধরে বিতার্কিকরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা আমাদের সহযোদ্ধা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যাদের প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে সফল হয়েছে, তাদের স্বপ্নের “নতুন বাংলাদেশ” বিনির্মানে তরুণ বিতার্কিকরা আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা ও যুক্তির লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
তিন দিনব্যাপী আয়োজিত আবাসিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজনের জন্য অংশগ্রহণকারী ৯৬ বিতার্কিক, বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়ে টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যে কোনো বৈষম্য ও দুর্নীতি প্রতিরোধে তরুণরাই প্রধান চালিকাশক্তি। আমাদের এই বিশ্বাস যে ভুল নয়, তা ২০২৪ এ এসে প্রমাণ করেছে তারা। আমরা চাই, সামনের দিনে যুক্তিনির্ভর সহনশীল একটি সমাজ তৈরি হবে এ সকল তরুণ বিতার্কিকের হাত ধরে।’
উল্লেখ্য, “রাষ্ট্র সংস্কার ও দুর্নীতি”-কে উপজীব্য করে সারা দেশের মোট ৩২টি দল নিয়ে ১২-১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ আবাসিক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে টিআইবি। বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৮৭টি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকা ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। এবারের আয়োজনের সেরা আটটি দল পরের বছরের প্রতিযোগিতায় সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে।