ফ্যাসিস্টদের মদদপুষ্ট কতিপয় আনসার সদস্যদের রক্তাক্ত হামলার প্রতিবাদ, ষড়যন্ত্রকারী সাবেক ডিজিসহ সকলের বিচার, প্রশাসনকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এ সমাবেশের ঘোষণা দেন।
সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে জানান, আজ সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ সমাবেশ করা হবে।
উল্লেখ্য, নিজেদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি আদায়ে গতকাল রোববার প্রায় ১০ হাজার আনসার সদস্য সচিবালয় ঘেরাও করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাতজন উপদেষ্টাসহ সচিবালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখেন।
উত্তেজিত আনসার সদস্যদের শান্ত করার জন্য বিকেলে আনসার ও ভিডিপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ সচিবালয়ে আসেন। এরপর আন্দোলনরত আনসারদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন আনসার ডিজি এবং উপদেষ্টারা।
বৈঠক শেষে দাবি মেনে নেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ সময় আনসার ডিজি ও আন্দোলনরত আনসারদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তারপরেও উত্তেজিত আনসার সদস্যরা সচিবালয় এলাকা ত্যাগ না করে সচিবালয় ঘেরাও করে রাখেন।
রাত ৯টার দিকে সচিবালয়ের সামনে সাধারণ আনসার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
পুলিশ কবে পুরোদমে মাঠে নামবে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন সারজিসের
সচিবালয়ের সামনে আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় নানা প্রশ্ন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে রাখলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এসব প্রশ্ন রাখেন। একই সঙ্গে রোববার (২৫ আগস্ট) সচিবালয়ের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যখ্যা তুলে ধরেন।
সারজিস আলম ফেসবুক পোস্টে লিখেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করতে চাই- পুলিশ কবে পুরোদমে মাঠে নামবে? সচিবালয়ে নিরাপত্তার এই অবস্থা কেন? ছাত্র-জনতাকে কেন যেতে হবে? আমার ভাইদের ওপর গুলি কেন চললো? এই আর্মস আনসার পেলো কোথায়?
তিনি লিখেন, বিগত ১ সপ্তাহ ধরে ঢাকার সরকারি ও প্রাইভেট অন্তত ২০টির অধিক হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে আমরা আমাদের আহত ভাইদের দেখেছি। ডাক্তার, রোগী, স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেছি। এই দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভেতর ও বাইরের নানা গল্প জেনেছি। সেগুলো আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে জানাতে চাই। তিনি আমাদের কথাগুলো শুনতে আমাদের ডাকেন।
তিনি আরও লিখেন, আমাদের ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় যাওয়া ট্রাকগুলো কিংবা যে গাড়িগুলোতে ত্রাণ বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্যাম্পাসে আসছিল সেগুলোও ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারছিল না। তাছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার নানা প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকে কল-ম্যাসেজ আসছিল ত্রাণের জন্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা, কার্যক্রম ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে যাই।
এই দুই বিষয় নিয়ে কথা বলতে যাওয়ার সময় সচিবালয়ের চারপাশের রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ করে আনসারদের আন্দোলন দেখতে পাই আমরা। পরে বিষয়টিও আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জানাই। আমরা জানতে পারি আমাদের পূর্বেই আমাদের অন্য দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে যৌক্তিক সমাধানের আহ্বান জানান।
তিনি লিখেন, পরে আমাদের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ তাদের সঙ্গে কথা বলে তখনই আলোচনার আহ্বান জানায় এবং ৭ সদস্যের একটি টিম নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ একাধিকবার আলোচনায় বসে। তাদের অনেক দাবি মেনে নেওয়া হয় এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে ধৈর্য ধরে যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, একটা গোষ্ঠী এসব আলোচনা মানতে চাচ্ছিল না। তাদের কথা ও কাজের ধরনই প্রকাশ করছিল তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। না হলে সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আলোচনার পরও সচিবালয়ে সবাইকে অবরুদ্ধ করে রাখার যৌক্তিকতা কি ? অথচ তখন তাদের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ের ভেতরেই ছিল। যখন দেশের ২টি বিভাগে প্রায় ১০টি জেলায় লাখ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত তখন সেখানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা না করে রাষ্ট্রকে এভাবে অস্থিতিশীল করার কারণ কি ?