বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন মো. ইমরান হোসেন (১৮)। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে মা নাজনীন বেগমকে বলেছিল, ‘মা দেশ কিন্তু স্বাধীন হবেই, প্রয়োজনে ছাত্রসমাজের জন্য শহীদ হব।’ এই কথা শোনার পর ইমরানের মা হাত ধরে বলেছিলেন, ‘আজকে বাসা থেকে বের হইস নাহ বাবা।’ মায়ের কোনো কথা না শুনেই বাসা থেকে বের হয়ে যায় ইমরান। তবে আর বাসায় ফেরা হয়নি তার। শহীদ হয়েছেন তিনি।
নিহত মো. ইমরান হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের উত্তর বড় ডালিমা গ্রামের। ওই গ্রামের মো. কবির হোসেন জোমাদ্দার ছেলে তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইমরান মেজো। দশম শ্রেণিতে লেখাপড়ার পর অভাবের কারণে আর লেখাপড়া সম্ভব হয়নি। ইমরান ঢাকার বায়তুল মোকারম মার্কেটে কার্পেটের একটি দোকানে চাকরি করতেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত হয় পুরো ঢাকা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। যাত্রাবাড়ি এলাকায় বেলা ১১টার দিকে পুলিশের একটি গুলি এসে ইমরানের গলায় লাগে। ইমরানের মা মোবাইল ফোনে কল করলে একজন রিসিভ করে জানায়, ইমরানের গুলি লেগেছে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন ইমরান মারা গেছে। এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে ইমরানের মা। এখনও ছেলের শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি ইমরানের মা নাজনীন বেগম।
ঢাকার মীরহাজির বাগ পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন ইমরান। ৫ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ইমরানের মরদেহ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী বাউফলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন ৬ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে জানাজা শেষে জোমাদ্দার বাড়ি মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ৯ আগস্ট পরিবারের সবাই ঢাকায় ফিরে যান। ইমরানের বাবা কবির হোসেন বিভিন্ন দোকানে মালমাল সরবরাহের কাজ করেন। ইমরানের বড় ভাই তফিকুর রহমান লিমন (২৫) নবাবপুরে একটি ফ্যান কোম্পানিতে চাকরি করেন, ছোট ভাই মাহাদুর রহমান মাহিন (১১) চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
ইমরানের চাচা মো. মিরাজ হোসেন জোমাদ্দার বলেন, ইমরান কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। এর আগেও একটা রাবার বুলেট লাগছে তারপরও ইমরান বলছে প্রয়োজনে আমি ছাত্রদের জন্য শহীদ হব। ওর আম্মা অনেক নিষেধ করছে, বাসা থেকে যাইস নাহ। বাসা থেকে হওয়ার আগে ইমরান তার মাকে বলেছিল, মা দেশ কিন্তু স্বাধীন হবে প্রয়োজনে ছাত্রসমাজের জন্য শহীদ হয়ে যাব।
ইমরানের চাচাতো ভাই মো. জিদান বলেন, ইমরান তো চইল্লা গেছে। ভাইরে তো আর পামু নাহ। আমার ভাইরে যারা নির্মমভাবে মারছে, আমি তাদের বিচার চাই।
ইমরানের বাবা কবির হোসেন জোমাদ্দার বলেন, আমার এই ছেলেটা (ইমরান) দেশ প্রেমিক ছিল। দেশের জন্য পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছে। এই দুনিয়াতে আমার ছেলের হত্যার বিচার হবে কিনা আমি জানি নাহ। আমি আল্লাহ্ কাছে বিচার দিছি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাউফলের শিক্ষার্থী মুনতাসির তাসরিপ বলেন, ছাত্র আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন আমরা তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দেখা করেছি, কথা বলেছি। আমরা সবাই চাই এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ বিচার হোক।