বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যেতে চেয়েছিলেন ১১ বাংলাদেশি। কিন্তু শেষমেষ আশ্রয় হয় সুন্দরবনের জঙ্গলে। পরে টহলদারি চালাতে গিয়ে ভারতীয় বন দপ্তরের কর্মীদের হাতে উদ্ধার হয়েছেন পাঁচ শিশুসহ ওই ১১ জন।
শিশু ছাড়াও তাদের মধ্যে পাঁচ নারী ও একজন পুরুষ রয়েছেন। বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের দায়ে তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, ওই ১১ বাংলাদেশির সকলের বাড়ি বাংলাদেশের খুলনায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তারা বিপাকে পড়েন।
তারা জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় যে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তারা’। এক পর্যায়ে ভারতে পালিয়ে যেতে এক দালালের শরণাপন্ন হন তারা।
গ্রেপ্তার হওয়া এক বাংলাদেশি নারীর অভিযোগ, দালালের সঙ্গে ৪৫ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল তাদের। কিন্তু সীমান্ত পার করে নিয়ে এসে দালাল তাদের জঙ্গলে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
শেষপর্যন্ত টহলদারির সময় বন দপ্তরের কর্মীদের নজরে পড়েন তারা। পরে তাদের সকলকেই সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী ওই ১১ জনের মধ্যে কেবল একজন পুরুষ এবং তাকেই এখন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে পুলিশ।
পুরনো বন্ধুকে নিয়ে এখন তিনটি রাস্তা খোলা ভারতের
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর থেকে ভারতেই রয়েছেন শেখ হাসিনা। এরইমধ্যে বাতিল হয়েছে তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট, দায়ের করেছে একশয়ের কাছাকাছি মামলা।
এদিকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় ভারতে এখন শেখ হাসিনার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি ইঙ্গিত পেয়েছে, এই মুহূর্তে পুরানো বন্ধু শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি রাস্তা খোলা আছে।
প্রথমটা হলো— বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।
দ্বিতীয়টা হলো— শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে ভারতেই রেখে দেওয়া।
তৃতীয়টা হলো— ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে। কারণ দল বা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে তিনি দেশে ফিরে সংগঠনের হাল ধরতেই পারেন।
শেখ হাসিনা ভারতেই রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। ফলে শেখ হাসিনার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাটাকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছেন তারা।
বিবিসি বলছে— ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনো অনুরোধ আসে, সেটা যে কোনো না কোনো যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত।
বিবিসি জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রস্তাব প্রথমেই বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার পর ইউএই (সংযুক্ত আরব আমিরাত), সৌদি আরব ও ইউরোপের দু-একটি ছোটখাটো দেশের সঙ্গে ভারত এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিল।
যদিও এই সব আলোচনায় তেমন একটা অগ্রগতি হয়েছে বলে খবর নেই। এরপর মধ্যপ্রাচ্যের আর একটি প্রভাবশালী দেশ কাতারের সঙ্গেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
পাশাপাশি এটাও ঠিক, শেখ হাসিনা নিজে এখনও কোনো দেশে ‘লিখিত আবেদন’ করেননি। তার হয়ে এবং তার মৌখিক সম্মতির ভিত্তিতে যাবতীয় কথাবার্তা ভারত সরকারই চালাচ্ছে।
একান্ত প্রয়োজন হলে শেখ হাসিনাকে ভারতেই রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে রেখে দিতে যে ভারত যে দ্বিধা করবে না, সেই ইঙ্গিতও কিন্তু দিল্লিতে এখন পাওয়া যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে আসছে— তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা, নেপালের রাজা ত্রিভুবন বীর বিক্রম শাহ বা আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহের নাম। তারা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছিলেন।
তেমনটা হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে এর প্রভাব কী পড়বে সেটাও ভাবতে হবে ভারতকে। ১৯৫৯ সালে দালাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে ভারত-চীন সম্পর্কে যে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল, ৬৫ বছর পরও তার রেশ রয়ে গেছে।
দিল্লিতে আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো স্ম্রুতি পট্টনায়ক বলছেন, যে আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে, তাতে একটা স্পষ্ট ভারত-বিরোধী চেহারাও ছিল। সেটা যেমন হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন ছিল, তেমনি ছিল ভারত-বিরোধীও! এখন যদি সেই ভারতই তাকে আশ্রয় দেয় তাহলে বাংলাদেশে তা একটা ভুল বার্তা দেবে এবং সে দেশে ভারত-বিরোধী সেন্টিমেন্টকে অবশ্যই আরও উসকে দেবে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।