পৃথিবীর দ্বিতীয় দামি মসলা ভ্যানিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে। ভ্যানিলা ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। বর্তমানে ভারতেও এই মসলার বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে ভ্যানিলার চাষ পদ্ধতি ও সহজতর পরাগায়নের গবেষনায় সফল হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিন। এতে মসলাটির বাণিজ্যিক উৎপাদনের সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, জাফরান পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলা। দ্বিতীয় মসলা হিসেবে ভ্যানিলা পরিচিত। ভ্যানিলা মূলত অর্কিড জাতীয় গাছ। যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায়, আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়। ছায়া পছন্দ করা এই উদ্ভিদ গবেষনার মাধ্যমে দেশের মাটিতে চাষের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এর চাষ পদ্ধতি ও সহজতর পরাগায়ন নিয়ে গবেষনায় সফল হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিন।
প্রতিকেজি ভ্যানিলা পডের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। দেশে উৎপাদন হয়না বলে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে ভ্যানিলা চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন হওয়ায় আমাদের আর আমদানি নির্ভর হতে হবে না। বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে এই ভ্যানিলা।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম জামাল উদ্দিন বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ভ্যানিলার চাষপদ্ধতি ও সহজতর পরাগায়ন নিয়ে গবেষনা শুরু করি। ভ্যানিলা আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়। এই উদ্ভিদ ছায়ায় থাকতে পছন্দ করে। মাটির সংস্পর্শে আসতে চায় না বলে খুঁটির সঙ্গে নেট দিয়ে কোকোডাস্ট বেঁধে সাপোর্ট তৈরি করে দিতে হয়।
তিনি আরো বলেন, ভ্যানিলার গাছ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ ঝরঝরে মাটিতে হয়ে থাকে। চারা রোপনের ৩-৪ বছর পর গাছে ফুল আসা শুরু করে। একেকটি থোঁকায় ১৫-২০টি ফুল থাকে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি করে পড হয়। আর পরাগায়ন থেকে পড হতে সময় লাগে ৬ মাস। একজন কৃষক বছরে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৬০০ কেজি কিউরড পড সংগ্রহ করতে পারবে। পড পরিপক্ক হওয়ার শেষের দিকে এতে গ্লুকোভ্যালিন উৎপাদিত হয়। যা ফারমেন্টেশনের সময় গ্লুকোজ ও ভ্যানিলিনে পরিণত হয়। আর এই ভ্যানিলিন থেকেই তৈরি হয় এর মোহনীয় নির্যাস।
ভ্যানিলা উৎপাদনের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা হলো এর ফুলের বৈচিত্রময় গঠন। যা পরাগায়নে বাধার সৃষ্টি করে। ভ্যানিলা ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ডের মাঝে ঠোঁট সদৃশ একটি পর্দা (রোস্টেলাম) থাকায় পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে পতিত হতে পারে না। পর্দাটি নিডল দিয়ে সরিয়ে কৃত্তিমভাবে সামান্য চাপ দিলেই পরাগায়ন সম্পন্ন হয়ে যায়। তবে এই কাজটি সম্পন্ন করতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে।
উৎপাদন শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে ইতোমধ্যে ভ্যানিলা উৎপাদন শুরু হয়েছে। আর এর চাষের জন্য শতাধিক ছাদ বাগনের মালিকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানিও করা যাবে এই অর্থকরী ফসল।