আওয়ামী মিডিয়া বন্ধু ফ্যাসিস্ট নঈম তারিক হতে চান ডিবিসি’র সিইও

অবশেষে আশা পূরণ হচ্ছে ‘আওয়ামী লীগের মিডিয়া বন্ধুখ্যাত’ ডিবিসি নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) নঈম তারিকের। আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী নঈম এখন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার নেশায় মত্ত। নিউজরুমে এখন তিনিই সর্বেসর্বা। চ্যানেলটির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন বরখাস্ত হওয়ায় নিউজরুমের কর্তা এখন নঈম। তদবির করছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার পদোন্নতিপত্র পেতে। এজন্য দৌড়ঝাপ করছেন নানা মহলে।

ডিবিসির প্রধান হতে যাদের পথের কাঁটা মনে করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের এইচ আর বিভাগে দেয়াচ্ছেন ভুয়া অভিযোগ। নঈমের খায়েশ পূরণ করতে তার পক্ষে নেয়া চারজন রিপোর্টার এবং দুজন প্রডিওসারকে তিনি বুঝিয়েছের তিনি ডিবিসির প্রধান হলে তার সিন্ডিকেট ভুক্তদের পদোন্নতি এবং ভালো ইনক্রিমেন্ট দিবেন। তবে তার এ পদে যেতে অফিসে অন্যায় অপেশাদারিত্বর বিরোধীতা করা কয়েকজন রিপোর্টারকে পথের কাটা মনে করছেন। কাটা মনে করার কারন নঈম বিরোধীদের বেশিরভাগই বিএনপিপন্থী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। নইমও মনে করছেন তারা থাকলে সুবিধা করতে পারবেন না।

জানা গেছে, ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম নিয়মিত আসেন না। প্রতিষ্ঠানের দুই সম্পাদক প্রনব সাহা চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। আরেক সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং এসাইনমেন্ট এডিটর মাসুদ কার্জনও বরখাস্ত হয়েছেন। এ সুযোগে চ্যানেলটিতে নিজেকে রাজা মনে করছেন নঈম তারিক।

ডিবিসি নিউজের বর্তমান সিএনই’র বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন হেনস্থার অভিযোগ। চাকরি প্রার্থী দুজন নারীকে প্রেজেন্টার বানানোর কথা বলে যৌন সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সাবেক একজন নারী সহকর্মী চাকরি ছাড়ার আগে নঈমের বিরুদ্ধে ফেসবুকে অশালীন প্রস্তাব দেয়ার লিখিত অভিযোগ দিয়ে গেছেন। এগুলোর তথ্য প্রমান রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নঈম আর পিন্টু সংবাদভিত্তিক চ্যানেলটির সম্পাদক প্রনব সাহাকে পদত্যাগপত্র দিতে বাধ্য করান। এরপর বাধ্যতামূলক দীর্ঘ ছুটিতে পাঠানো হয় মজুমদার জুয়েলকে। ডিবিসি নিউজের একজন সিনিয়র নিউজরুম এডিটরের ভাষ্য, “মজুমদার জুয়েলের ছুটি কবে শেষ হবে তা খোদা ছাড়া কেউ জানে না!”

নানা ষড়যন্ত্র করে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের গুজব সেল খ্যাত সিআরআই থেকে মাসোহারা নেয়ার তালিকা প্রকাশের পর চাকরি হারান ডিবিসির প্রভাবশালী সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু এবং এসাইনমেন্ট এডিটর মাসুদ কার্জন। গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, ছাত্রলীগের সাবেক এই দুজনসহ আওয়ামী ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিএফআইইউ তদন্ত করছে।

জানাগেছে, পিন্টুর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিলো তিনি তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যাকারী বলে তিনটি বই লিখেছিলেন আওয়ামী শাসনামলে। তাই ডিবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ী শহিদুল আহসান আওয়ামী সরকার পতনের পরও পিন্টুর চাকরি অব্যাহত রাখায় চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত পিন্টু এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কার্জনকে বরখাস্ত করে ডিবিসি নিউজ। সবশেষ একসহকর্মীর সঙ্গে অপেশাদার আচরণ এবং প্রতিষ্ঠানবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য চাকরি হারান ডিবিসির যুগ্ম বার্তা সম্পাদক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার নাদিম মাহমুদ।

ডিবিসির কয়েকজন সাংবাদিক জানান, নঈম তারিক একজন শান্ত স্বভাবের চানক্য। খুব ঠান্ডা মাথায় কটু বুদ্ধি নিয়ে সহকর্মীকে ঘায়েল করেন। অফিসে নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তিনি তৈরি করেন। তার নির্দেশে ম‍্যানেজম‍্যান্টের বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য করিয়েছেন চারজন রিপোর্টার এবং দুজন প্রডিউসারকে। যারা এখন চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর সিইও মন্জুরুল ইসলাম প্রধান বার্তা সম্পাদক নইম তারেককে নিউজ রুম দেখাশোনার দায়িত্ব দেন, ১০ আগস্ট সম্পাদক প্রনব সাহা, আরেক সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু অফিসে আসা শুরু করলেও নইম তাদের অবজ্ঞা করে নিউজরুমে কতৃত্ব বজায় রাখেন।

জানা গেছে, ডিবিসির শুরুতে প্রনব সাহার সুপারিশে কতৃপক্ষ জায়েদুল আহসান পিন্টুকে সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেন। দু সম্পাদকের মধ্যে বিরোধ তৈরি করেন নইম তারেক নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য।

নাম না প্রকাশ না করার শর্তে ডিবিসির একজন প্রযোজক দাবি করেন, নিজের বার্তা প্রধান বা সম্পাদক হবার পথ পরিষ্কার করতে সম্পাদক পিন্টুর বিরুদ্ধে লাগেন নঈম। পিন্টুকে সিইও মন্জুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেন এবং সিইওর কাছে পিন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে থাকেন। শুধু তাই নয় সিইও এবং ম‍্যানেজম‍্যান্টের কাছে পিন্টুর বিরুদ্ধে প্রকাশ হওয়া নিউজ, ভিডিও উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি বিএনপি বিটের রিপোর্টার জাকারিয়াকে দিয়ে বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে চাপ দিতে থাকেন পিন্টুকে চাকরিচ্যুত করার। নানামুখী চাপে এবং আর্থিক কেলেংকারির দায়ে বরখাস্ত হন পিন্টু ও কার্জন।

ডিবিসিতে শুরু থেকে কাজ করা একজন সাংবাদিক বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বিনাবিচারে হত্যাকারী উল্লেখ করে বই লেখা জায়েদুল আহসান পিন্টুর লেখা বইগুলো কৌশলে নঈম তারেকই ছড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ধুরন্দর নঈমের খেলা বুঝা সহজ নয়! তারা খায়েশ মেটানোর জন্য প্রয়োজনে তার সিন্ডিকেটের লোককেও ফেলে দিতে দ্বিধা করেন না।

সূত্র জানায়, সম্পাদক প্রনব সাহা এবং জায়েদুল আহসান পিন্টুর চাকরি যাবার পর সিইওর সাথে যোগসাজস করে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন ডিবিসিতে। সিইও মন্জুরুল ইসলাম নঈম তারেককে সম্পাদক পদে পদোন্নতির ঘোষণা দেন।
নঈম তারেক সম্পাদক হওয়া যখন নিশ্চিত তখন তার লোভ আরও বেড়ে যায়। এবার তিনি সম্পাদক পদে সন্তুষ্ট নন, আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন সিইও হবার। তাই রিপোর্টার যাকারিয়া, কাওসারা কুমু, মাসুদূর রহমান ও তরিকুল ইসলাম মোহনকে দিয়ে সিইওর বিরুদ্ধে নানা পোর্টালে নিউজ করে, ম‍্যানেজম‍্যান্টের অন‍্য পার্টনারদের সাথে দুরত্ব তৈরির কাজ শুরু করেছে। জানা যায়, ৫ই আগষ্ট পরবর্তী ডিবিসির সিইও মন্জুরুল ইসলাম বেশ কিছুদিন অফিসে আসলেও এখন তিনি অনিয়মিত। অফিসে অনিয়মিত আসার সুযোগে সিইও পদ পাবার চুড়ান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে বলির পাঠা বানাতে যাচ্ছেন রিপোর্টার কুমু, মাসুদসহ চার রিপোর্টার ও প্রোডাকশনের মাহিন ও নিপুকে। এদের প্রতিষ্ঠান বিরোধী কার্যকলাপ এবং প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনের পেশাদার কর্মীর বিরুদ্ধে তারা যেসব পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন তাও ডিবিসি কর্তৃপক্ষ অবগত।

ডিবিসির ডেস্কে কাজ করা একজন সিনিয়র কর্মী জানান, সিইও মন্জুরুল ইসলামের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করছেন নইম তারেক। তিনি সম্পাদক পদ নিয়ে সিইওর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সমঝোতা করে এগিয়ে যাচ্ছেন। কারন সম্পাদক পিন্টু চাকুরীরত অবস্থায় নইম সিইওর প্রতিনিধি হিসেবে জামায়াতে ইসলামির ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে সভায় অংশ নিয়েছেন।

সিইওর সাথে সুসম্পর্কের কারণে ইতোমধ্যে অনেক মেয়ে নাইমের বিরুদ্ধে উত‍্যক্ত করা, নিউজরুমে ঘুমিয়ে থাকার মত অভিযোগ পেয়েও কতৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উলটো সিইও তাকে অনলাইনে বদলী করে চাকরি রক্ষা করেন। সিইওর সাথে তার এই সমঝোতার কারন জানা যায়নি ।

প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মীর অভিযোগ, নইম তারেক রিপোর্টার্সদের দুটি গ্রুপ বানিয়ে তাদের একটি গ্রুপকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছেন এবং তাদের পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। কতৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এবং সম্পাদক পিন্টু দায়িত্ব থাকাকালীন তাকে বাদ দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর একটি মিটিং করেন এবং রিপোর্টারদের দু গ্রুপের মধ্যে বিরোধ লাগিয়ে দেন।

নিজে তা উপভোগ করে ফেইসবুকে পোস্ট দেন-“মঞ্চে বসে নাটক দেখতে ভালো লাগে “
এখন আবার নঈম তারিক তার গ্রুপকে দিয়ে সিইওর কাছে অভিযোগ দায়ের করাচ্ছে যাতে আরও কজনের চাকরি যায়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই বিএনপি ঘরানার সাংবাদিক। বিকৃত মানসিকতার নঈম তারিক তার কাঙ্খিত গদি পেতে নিরীহ সাংবাদিকদের চাকরি খেতে মত্ত। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মী জানান, যাদের পথের কাটা মনে করছেন তাদের বাদ দিলেই ডিবিসিতে হবে নঈমের রামরাজত্ব!

About 201103 Tiger

Check Also

চট্টগ্রামে বিএনপি’র সমাবেশে লাখো জনতার ঢল

রাজধানী ঢাকার ১৬টি জোনে সমাবেশের পর আজ বুধবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *