পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ির সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গৌরবময় মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হতে শরীয়তপুরের লাখো মানুষ এরই মধ্যে বাংলাবাজার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ঘাটের জনসভাস্থলে পৌঁছেছেন। কিন্তু করোনা পজিটিভ হওয়ায় জনসভায় যোগ দিতে পারছেন না শরীয়তপুরের তিন সংসদ সদস্য।
আজ শনিবার (২৫ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে করোনা পজিটিভের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তারা নিজেই। তারা হলেন, শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু তার ফেসবুকে লিখেছেন, আজ ২৫ জুন ২০২২, বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় দিন। আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অনুষ্ঠান সফল করার লক্ষ্যে আমরা গত এক মাস যাবত কাজ করে যাচ্ছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য (তিন দফা করোনা পরীক্ষা করি) গতকাল রাতেও আমাদের তিনজনেরই কোভিড পজিটিভ হওয়ার কারণে আমরা অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারছি না। ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের মানুষকে এমন একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য। কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের জন্য।
এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশাল সমাবেশে ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষ যোগদান করেছেন। এছাড়া পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চ প্রাঙ্গণে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট এবং এসএসএফ সদস্যরা অনুষ্ঠানস্থলে কাজ করছেন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন আজ হলেও সেতুর ওপর দিয়ে পরদিন (রোববার) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। সেতুটি রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১টি জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি আনবে। সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এই সেতু দিয়ে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুবিধা পাবে।
১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল দিলেন প্রধানমন্ত্রী সপ্নের পদ্মা সেতু শুধু সপ্ন নয়, এখন তা বাস্তব। আজ (শনিবার) দুপুর ১২টায় মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বহুল প্রতিক্ষীত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উদ্বোধন উপলক্ষে ১০০ টাকার স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিন নিজ হাতে টোল পরিশোধ করে পদ্মা সেতুতে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় টোল পরিশোধ করেন তিনি। প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে টোল গুণতে হয়েছে ৭৫০ টাকা। নিজের গাড়ি বহরের সবকটির টোলও তিনি দিয়েছেন। সেজন্য আরও দিতে হয়েছে ১৬ হাজার ৪০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর টোল আদায়কারী কর্মকর্তা তানিয়া আফরিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথমে নিজের গাড়ির টোল দিয়েছেন। বাকি বহরের টাকাও তিনি পরিশোধ করেছেন।’
এর আগে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উদ্বোধন উপলক্ষে ১০০ টাকার স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পরেই টোলপ্লাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। সেখানে টোল দিয়ে মাওয়া প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করে মোনাজাতে অংশ নেন। সেখান থেকে সড়ক পথে জাজিরা প্রন্তের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু পার হয়ে তিনি পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করে আবারও মোনাজাতে অংশ নেন।
সাঁতরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন কিশোরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে অনেক সময়েই বহু নজির গড়তে দেখা গেছে ভক্ত কিংবা সাধারণ মানুষের। প্রধানমন্ত্রীও সেই ভালোবাসার মূল্যায়ন করেছেন। তার বহু মানবিক আচারণের ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়ও। তেমনি এক ঘটনা চোখে পড়লো শনিবার (২৫ জুন) ঐতিহাসিক পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনে।

এদিন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মাদারীপুরের শিবচরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জনসভার মঞ্চ তৈরি করা হয় পদ্মা সেতুর আদলে। মঞ্চে সেতুকে আরও জীবন্ত রূপ দিতে জলাধারের ওপর এটি নির্মাণ করা হয়। পানিতে রাখা হয় নৌকাও।
মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যর শেষে দেখা দেয় অভাবনীয় এক দৃশ্যের। পানিতে নেমে এক কিশোরী সাঁতরে এগিয়ে যেতে থাকেন মঞ্চের দিকে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে বাধা দিতে গেলেও মঞ্চের সামনে থাকা দলটির জেষ্ঠ্য নেতারা বাধা দিতে নিষেধ করেন। এরপর ওই কিশোরী সাঁতরে মঞ্চের কাছে চলে যায়।
এসময় ওই কিশোরী প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীও মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওই কিশোরীর সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। যদিও ওই কিশোরী কি কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তা শোনা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর এমন আচরণের প্রশংসা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরপর কথা বলা শেষে ওই কিশোরীকে সরিয়ে নিয়ে যান পুলিশের নারী সদস্যরা।
পদ্মা সেতুতে অ্যাম্বুলেন্স টোল ফ্রি করার দাবি জাফরুল্লাহর ব্যাপক উচ্ছাসের সঙ্গে উদ্বোধন হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। এই সেতু পার হওয়ার সময় রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স থেকে টোল না নেওয়ার দাবি জানান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শনিবার (২৫ জুন) হুইল চেয়ারে করে মাওয়াপ্রান্তে সেতুর উদ্বোধনস্থলে হাজির হয়ে এই দাবি জানান তিনি।
জাফরুল্লাহর বলেন, আজকে আমাদের স্বপ্ন, আমাদের যোগসূত্র, প্রধানমন্ত্রীরে সাহসী উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। সেজন্য আমরা আনন্দিত। তবে ওনার কাছে আমার একটাই আবেদন থাকবে, এই পদ্মা সেতু দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের যেন টোল ফ্রি থাকে আর বিদেশিদের জন্য ডবল ট্যাক্সের ব্যবস্থা থাকে। এ সময় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দাওয়াত পাওয়ায় তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি এও বলেন, আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, সেজন্য আমি খুশি। আমি মনে করি, খালেদা জিয়াকেও আজকে দাওয়াত দেওয়া উচিত ছিল।
পদ্মায় প্রধানমন্ত্রীর মাতৃত্বের পরশে পুতুল, ভিডিও ভাইরাল খরস্রোতা পদ্মার বুক চিরে হয়েছে সেতু। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে দুই যুগের বোনা স্বপ্নজয়ের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশ। স্বপ্নযাত্রার লড়াইয়ে মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিও আজ উদ্বেলিত। একমাত্র মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে উদ্বোধন করেছেন গর্বের এ সেতু।
দেশের সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কাছে প্রমত্তা পদ্মা নতজানু হয়ে আজ অভিবাদন জানিয়েছে। আর পদ্মার দামাল বাতাসও হার মেনেছে এই মমতাময়ী মায়ের কাছে। সেই মাতৃত্বের মধুর ও বিরল মুহূর্তটিও ধরা পড়লো পদ্মা সেতুর ওপর যখন মা মেয়ে পাশাপাশি হাঁটছিলেন। পদ্মার প্রবল বাতাস তখন মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের চুল এলোমেলো করছিল। শত ব্যস্ততার মাঝেও মা শেখ হাসিনার নজর এড়ায়নি। একেই বলে মা। তিনি নিজের মাথা থেকে ক্লিপ খুলে মেয়েকে দিলেন চুল সামলাতে। বাতাস পারল না আর।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মধুর ক্ষণটির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এর নিচে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ আহা!! কী মধুর এই ক্ষণ। মা তো মা’ই হয়। এতো বড় একটা দায়িত্বের ক্ষণেও মেয়ের চুলের দিকে তার নজর এড়ায়নি। ছবি তুলতে সমস্যা হচ্ছে তাই মাথা থেকে ক্লিপ খুলে মেয়েকে দিলেন বাতাসের হাত থেকে চুল বাঁচানোর জন্য। এমন কেন আপনি প্রধানমন্ত্রী? এতো ভালো না হলেই কি নয়? চোখের কোণ ভিজে গেলো।’ তিনি ভিডিওটি যিনি প্রকাশ করেছেন, তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
মা-মেয়ের এমন দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করেছে। কেউ কেউ লিখছে ঐতিহাসিক দিনের সেরা মুহূর্ত। এর আগেও উদ্বোধনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে একমাত্র মেয়ে পুতুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সেলফি তুললেন মা শেখ হাসিনা।
খালেদা জিয়া আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতু হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালে পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও খালেদা জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া সেটি বন্ধ করেছিল। পরে ক্ষমতায় এসে আবার পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করি। খালেদা জিয়া বলেছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। আজকে খালেদা জিয়াকে বলতে চাই, আসুন দেখে যান- পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কিনা।
আজ শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত দলের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তিনি সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের মানুষ অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করেছেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত একটি দেশকে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্য আমাদের, ৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির পিতাসহ তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নেই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই। তিনি আরো বলেন, আমি যখন দেশে আসি; তখন লক্ষ্য ছিল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ওয়াদা ছিল, প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলবে। আজকে প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি।
বাংলাদেশে একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে যারা জমি দিয়েছেন, তাদের ঘর-জমি জীবিকা করে দিয়েছি। ঠিক সেভাবে দেশের প্রত্যেক মানুষ যাতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেব। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।
জাতির সব অর্জন এখন অন্ধকারে হারিয়ে যেতে বসেছে: মির্জা ফখরুল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে এখন দুঃসময় চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক যারা গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার তারা সরকারের জুলুমের স্বীকার হচ্ছে। কেউ কেউ আবার গুম হচ্ছে, পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। কেউ আবার চিরোদিনের জন্য হারিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিএনপি থেমে থাকছে না, বরং সরকারের জুলুমের গতি পূর্বের মতোই চলমান আছে। জাতির অর্জন ও সামনে এগিয়ে যাওয়া এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রতিনিয়ত জুলুম, নির্যাতনের দ্বারাই ণতন্ত্রের ওপর সর্বোচ্চ আঘাত হানা হচ্ছে।
শনিবার (২৫ জুন) জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসে আমি বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের নির্যাতিত ব্যক্তি, সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, যুগে যুগে মানুষ বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বৈরশাসক ও নিষ্ঠুর একনায়ক এবং একদলীয় শাসনের দ্বারা মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে। এখনও বিশ্বব্যাপী কোনো না কোনো অঞ্চলে ভাষা, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায় নিয়ে সংঘাত চলছে। মহাসচিব বলেন, এই সরকারের জেহতু জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নাই, সেহেতু গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে হাতের মুঠোয় নিয়ে একদলীয় অপশাসনের জগদ্দল পাথর জনগণের বুকে চাপাচ্ছে।
এ সময় গণতন্ত্রের মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বানোয়াট মামলায় গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, দেশনেত্রী ভীষণ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও সরকার তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না। সুচিকিৎসার অভাবে তার জীবনকে সংকটাপন্ন করে তোলা হয়েছে। আমি আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবসে দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
নিষেধের পরোয়া না করে পদ্মা সেতুতে উৎসুক জনতার ঢল মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে বহুল প্রতিক্ষীত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১২ টায় সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি।
এদিকে উদ্বোধনের পর আগামীকাল রোববার (২৬ জুন) থকেই এ সেতুতে পার হবে যানবাহন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, পদ্মা সেতুতে এই সময়ে করা যাবে না হাঁটাহাঁটি। থামানো যাবে না গাড়ি। তবে, উদ্বোধনের দিনে এই নির্দেশনাগুলোর কোনোটাই মানছেন না উৎসুক জনতা।
শনিবার দুপুরে সেতু উদ্বোধন করার পরপরই এই সেতু দিয়েই শরীয়তপুর প্রান্তে যান প্রধানমন্ত্রী। তার গাড়িবহর পদ্মা সেতু পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই ১টার দিকে সেতুর দিকে ছুটে যায় মানুষ। আনন্দে দিশাহারা হয়ে জনতা পদ্মার বেষ্টনি টপকে সেতুতে উঠে পড়ে।কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দেয়া থাকলেও তা মানিতে আগ্রহী ছিলেন না অনেকেই। এ সময় অনেককে হেঁটে পদ্মা সেতু পার হতে দেখা যায়। কেউবা আবার সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে তুলছেন সেলফি।
হাঁটাচলা নিষেধ হলেও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই পদ্মা সেতুতে উঠে পড়ে লাখো মানুষ।এ সময় তাদের বাধা দেননি সেতুতে দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নিয়ম না থাকলেও এর আগেই বেশ কিছু গাড়ি ও মোটরসাইকেলকে সেতুতে উঠতে দেখা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় হেঁটে সেতুতে উঠতে থাকে মানুষ। এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাতে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব রক্ষার্থে ব্যবহারকারীদের জন্য বেশকিছু বিধিনিষেধ ও নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা, পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে এসব বিধি নিষেধের কোনটিকেই গুরুত্ব দেননি উৎসুক জনতা।
প্রধানমন্ত্রীর পাশে সেই আবুল হোসেন-মোশাররফ দীর্ঘ অপেক্ষার পর দেশের অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তার পাশে ছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসেন ভূঁইয়া। উদ্বোধনী মঞ্চে সৈয়দ আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পা ছুঁয়ে সালাম করেন।
সেতুর উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, আজ শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে মাওয়া প্রান্তে টোল পরিশোধ শেষে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। এর আগে হেলিকপ্টারে করে সেখানে আয়োজিত সুধী সমাবেশস্থলে পৌঁছান তিনি। সেখানে তিনি বক্তব্য দেন।
নাতি-নাতনিদের কাছে গল্প করবো কীভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দিতাম সপ্নের পদ্মা সেতু আর শুধু সপ্ন নয়, এখন তা বাস্তব। আজ (শনিবার) দুপুর ১২ টার দিকে মাওয়া পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বহুল প্রতিক্ষীত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উদ্বোধন উপলক্ষে ১০০ টাকার স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শীট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সাক্ষী হতে পারাটা নিঃসন্দেহে জীবদ্দশায় দেখা ভালো ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ। শনিবার (২৫ জুন) ফেসবুকে শেয়ার করা একটি স্ট্যাটাসে এসব কথা লেখেন তিনি।
স্ট্যাটাসে নাজনীন আহমেদ লিখেছেন, আব্বা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ থাকায় আমার তৃতীয় শ্রেণি থেকে এসএসসি পর্যন্ত সময় কেটেছে খুলনায়। কিন্তু নানার বাড়ি নরসিংদী হওয়ায় বছরে অন্তত দুবার পদ্মা পাড়ি দেওয়া হতো। ফেরিতে নদী পাড়ি দিয়ে তারপর ঢাকায় আসতাম, তারপর যেতাম নরসিংদী। খুলনা থেকে রওনা দেওয়ার পর মূল চিন্তা থাকতো ফেরিতে উঠতে যাতে বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে না থাকা লাগে; ঘাটে গিয়ে যেন ফেরি পেয়ে যাই। তবে সবদিন ভাগ্য ভালো থাকতো না। অধিকাংশ দিন ফেরিঘাটে এক-দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হতো।
নাজনীন আহমেদ আরও লেখেন, আর কয়েক ঘণ্টা পরেই চালু হয়ে যাবে পদ্মা সেতু। ভাবা যায়! ফেরির জন্য এখন আর মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। ভাবতেই ভালো লাগছে এখন অনেক কম সময়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়া যাবে। বেঁচে থাকলে হয়তো নাতি-নাতনিদের কাছে গল্প করবো, এক সময় কীভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দিতাম। এমন একটি স্থাপনা উদ্বোধনের সাক্ষী হতে পারাটা নিঃসন্দেহে জীবদ্দশায় দেখা ভালো ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম।’
টানা ১৯ দিন বন্ধ থাকবে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং ঈদুল আযহা ও আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে ২৮ জুন থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত মোট ১৯ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জানানো হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ছুটি তালিকায় গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১৬-২৩ মে নির্ধারিত ছিল। শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি প্রদানের সুবিধার্থে পূর্বে নির্ধারিত গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১৬-২৩ মে’র পরিবর্তে ২৮ জুন থেকে ৫ জুলাই সমন্বয়পূর্বক নির্ধারণ করা হলো।
এমতাবস্থায় আগামী ২৮ জুন থেকে ৫ জুলাই গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও ৬ থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ঈদুল আযহা এবং আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে বিদ্যালয়ে সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online