জুনায়েদ-জেরিনের (ছদ্মনাম) প্রেম চার বছরের। বেশ ভালোই চলছিল তাদের প্রেম। তবে দুজনের মন এক হলেও মানতে নারাজ পরিবার। জেরিনের পরিবার কোনোভাবেই জুনায়েদকে মেনে নিচ্ছিল না। তাই প্রেমিকের কথায় মাকে রাজি করাতে যান জুনায়েদ। পায়ে ধরে অনুরোধও করেন। কিন্তু মন গলেনি প্রেমিকার মায়ের। উল্টো ভালোবাসার প্রমাণ দেখতে চান।
আবেগের বশে বিষপান করেন প্রেমিক। তাও প্রেমিকার মায়ের সামনেই। শেষমেশ আর জুনায়েদকে বাঁচানো গেল না। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের। শনিবার সকালে সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান জুনায়েদ। ২১ বছর বয়সী জুনায়েদ উপজেলার শহরতলীর সুরভী আবাসিক এলাকার সামসু মিয়ার ছেলে। তিনি শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। জানা গেছে, জুনায়েদের সঙ্গে চার বছর ধরে উপজেলার
মোহাজেরাবাদ গ্রামের হামিদ উল্লার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের প্রেম চলছিল। তবে এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি মেয়েটির পরিবার। সম্প্রতি পারিবারিকভাবে জুনায়েদের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। এমন সংবাদ পেয়ে মেয়েটি জুনায়েদকে জানিয়ে দেন- অন্যত্র বিয়ে করলে তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করবেন। এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন জুনায়েদ। আবার মেয়েটির পরিবারও তাকে মেনে নিতে রাজি নয়। নিহতের বন্ধুরা জানান, প্রেমিকা তার মাকে রাজি করাতে জুনায়েদকে বলেন।
এজন্য শুক্রবার বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যান জুনায়েদ। সম্পর্ক মেনে নিতে তিনি প্রেমিকার মায়ের পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। কিন্তু কর্ণপাত না করে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মেয়েটির মা। উল্টো বলেন- মেয়েকে সত্যিকারের ভালোবাসে কিনা তা প্রমাণ দিতে। কী করতে হবে জুনায়েদ জানতে চাইলে মেয়েটির মা তাকে বিষপান করতে বলেন। ভালোবাসার মানুষকে পেতে তীব্র আবেগের বশে বাড়িতে রাখা কীটনাশকের বোতল খুলে পান করেন জুনায়েদ।
এ সময় বিষক্রিয়া শুরু হলে জুনায়েদ দৌড়ে বাইরে এসে বন্ধুদের ঘটনা জানান। এরপর বন্ধুরা তাকে দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সিলেটের আল-রায়হান হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুনায়েদ মারা যান। পরে একই দিন দুপুরে মরদেহ শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসা হলে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করেন।
এ বিষয়ে জুনায়েদের প্রেমিকা বলেন, ঘটনার দিন বিকেলে জুনায়েদ আমাদের বাসায় এসে দীর্ঘসময় মায়ের পা ধরে কান্নাকাটি করেন। এ সময় আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে মাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু মা তাকে জানান, তার বাবা-মা যেখানে ঠিক করেছেন সেখানেই বিয়ে করতে। এতে মা রাজি না হলে জুনায়েদ চলে যান। বিষপানে আত্মহত্যার খবরটি তারা আজ জেনেছেন। মেয়েটির মা সেলিনা বেগম বলেন, জুনায়েদ আমাদের বাড়ি আসার সময় বাড়িতে পুরুষ মানুষ ছিল না।
এ ঘটনায় আমরা থানায় একটি জিডিও করি। নিহত জুনায়েদের বাবা সামছুদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুপুরে আমার ছেলের বন্ধু ফোন করে বলে, শহরের মোহাজিরাবাদে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন। জুনায়েদ যে মেয়েটির সঙ্গে প্রেম করতো তাদের ঘরেই নাকি সে বিষ খেয়েছে। সংবাদ পেয়ে আমি অটোরিকশা নিয়ে প্রথমে জুনায়েদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি। সেখান থেকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সিলেট নিয়ে যাওয়ার পর সে মারা যায়। শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ন কবির বলেন, এ ঘটনা নিয়ে পুলিশ এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে রহস্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online