বরিশালের নিখোঁজ দীপ্ত মণ্ডল নামে আট বছর বয়সী শিশুর মরদেহ মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টায় উজিরপুর উপজেলার হারতা ইউনিয়নের কাজিবাড়ীর পার্শ্ববর্তী হারতা-সাতলা খাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতরা হলো- একই এলাকার রতন বিশ্বাস, তার স্ত্রী ইভা ও নয়ন শীল।
চাঞ্চল্যকর শিশু দীপ্ত মণ্ডল হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। দীপ্তর পাষণ্ড মা ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিকসহ গ্রেপ্তারকৃত চার আসামি আদালতে হত্যাকাণ্ডের আদ্যেপান্ত খুলে বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল ১ জুন বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলি আদালতের বিচারক মো. মাহফুজুর আলমের কাছে তাঁরা হত্যার ঘটনায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরকীয়া প্রেমিক সেলুন কর্মচারী নয়ন শীলের (৩৫) সঙ্গে নিজ মাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলার কারণে মায়ের চোখের সামনে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী দীপ্ত মণ্ডলের (৮) ঘাড় ভেঙে ও গলা টিপে হত্যা করা হয়।
জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার অতুল চন্দ্র শীলের ছেলে নয়ন শীল বরিশালের উজিরপুরের হারতা বাজারে রতন বিশ্বাসের সেলুনে কাজ করার সুবাদে হারতা ইউনিয়নের কাজীবাড়ী এলাকার দিনমজুর দীপক মণ্ডলের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করেন। একপর্যায়ে দীপকের সুন্দরী স্ত্রী সীমা মণ্ডলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নয়ন। ঘটনার দিন শুক্রবার (২৭ মে) হারতা মাছ বাজারের পাশে মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান বার্ষিক কীর্তন দেখতে যায় সীমা মণ্ডল (২৬) ও তার ছেলে দীপ্ত। রাতে সেখানে হাজির হন নয়ন শীল। একপর্যায়ে প্রেমিকা সীমাকে নিয়ে তার সেলুনে যান এবং সেখানে তারা অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে শিশু দীপ্ত সেখানে উপস্থিতত হয় এবং পরপুরুষের সঙ্গে মাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে।
এটাই কাল হয় দীপ্তর জীবনে। সব কথা তার বাবাকে বলে দেবে―এই ভয়ে তার মার চোখের সামনে ঘাতক নয়ন শীল শিশু দীপ্ত মণ্ডলের ঘাড় মটকে ভেঙে ফেলে ও গলা টিপে হত্যা করে। পরে দীপ্তর মা প্রেমিককে বাঁচাতে বাড়িতে গিয়ে ছেলে নিখোঁজের নাটক সাজান। এ বিষয়ে ২৮ মে তার পিতা দীপক মণ্ডল বাদী হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুম ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানা ছক আঁকেন সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী ইভা বিশ্বাস। তারা মরদেহটি ড্রামের মধ্যে লুকিয়ে অটোগাড়িতে করে নিয়ে বস্তায় ভরে হারতা বাজারসংলগ্ন খালে ফেলে দেন। আর ছেলে নিখোঁজের নাটক সাজায় দীপ্তর পাষাণী মা সীমা মণ্ডল (২৬)। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে বুধবার (১ জুন) দুপুরে বরিশাল সিনিয়র চীফ জুড়িসিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সীমা মণ্ডল, তাঁর পরকীয়া প্রেমিক ঘাতক সেলুন কর্মচারী নয়ন শীল (৩৫), সেলুন মালিক রতন বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী ইভা বিশ্বাস।
উজিরপুর মডেল থানার ওসি আলী আর্শাদ জানান, চাঞ্চল্যকর দীপ্ত হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে পরকীয়া ও অনৈতিক সম্পর্ক। দীপ্তর মা সীমা সরাসরি হত্যায় জড়িত। চারজন আদালতে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online