একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে যে পাকিস্তান নিরস্ত্র-নিরীহ বাঙালির ওপর বর্বর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছিল, সেই দেশের পক্ষ নিয়ে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) হারুনুর রশীদ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর এবং মাঠে পতাকা ওড়ানো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে জাতীয় সংসদে এমপি হারুন বলেন, কোনো দেশের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব দেখানো ঠিক নয়।
শনিবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে হারুন বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হচ্ছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশের সঙ্গে খেলছে। বাংলাদেশ যা-ই খেলুক না কেন, পাকিস্তানের সমর্থকেরা তাদের পতাকা ওড়াচ্ছে। এটাকে কেন্দ্র করে একটা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, তারা কিন্তু আমাদের দেশে মেহমান, অতিথি। আমাদের দেশের ক্রিকেট, আমাদের দেশের ফুটবল, আমাদের দেশের মেয়েরা সারা পৃথিবীতে খেলছে। সেখানে পতাকা ওড়ে না বাংলাদেশের?’
তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন একজন সদস্য দেখলাম বিভিন্নভাবে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলেছেন। ’
বিএনপির হারুনের এমন বক্তব্যে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। হারুন বক্তব্য দেওয়ার সময় সরকারি দলের সদস্যরা তুমুল হইচই করে প্রতিবাদ জানান।এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে পুরো সংসদ।
তখন হারুন তার বক্তব্য চালিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান টিম তো আসার দরকার ছিল না। পাকিস্তানি টিমকে কেন খেলতে দিয়েছেন? খেলতে দিতেন না। দরকারই ছিল না। আপনি তো তাদের অনুমতি দিয়েছেন। তারা এখানে এসেছে। এটি ঠিক নয়। একটি দেশের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ঠিক নয়। এটি আমাদের জন্য সম্মানের নয়, গৌরবের নয়।’
হারুন তার বক্তব্যে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্বৃত করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ভারত বার্মার মতো অতীত থেকে মুখ ফিরিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। অতীতের তিক্ততা দূর করতে কোনো প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত্ত হইনি। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা প্রদর্শন করে উপমহাদেশে শান্তি সহযোগিতার নতুন ইতিহাস রচনা করেছি। আমরা আমাদের আন্তরিকতার প্রমাণ দিয়েছি।’
তিনি বলেন, দেশে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরপরই ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়েছিলেন, এটি তার ঐতিহাসিক দলিল। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা ব্যাপক হট্টগোল করলে হারুন স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিয়ে কথা বললাম, এখানেও যদি বাধা দেন, তাহলে আর কী বলব মাননীয় স্পিকার। আমি এমন কিছু বলিনি, আমি ওনার ভাষণ পড়ে শুনিয়েছি।’
পরে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে হারুনের এমন অবস্থান ও বক্তব্যের কড়া জবাব দেন। খালিদ বলেন, সংসদ সদস্য হারুন যেভাবে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, তাতে তাদের চরিত্র বেরিয়ে এসেছে।তারা যে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের পক্ষে কথা বলছেন ও রাজনীতি করছেন, তারা যে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান হত্যাকারীদের শুধু লালন-পালনই করেননি, পাকিস্তানি ধারা বাংলাদেশে প্রবর্তন করার জন্য সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছেন। একই ধারায় তারা এখনো রাজনীতি করে যাচ্ছেন। এর প্রমাণ আজ হারুনুর রশিদ সংসদে উপস্থাপন করলেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান অপরাধ করেছে। বঙ্গবন্ধু যেহেতু শান্তিকামী মানুষের নেতা ছিলেন। তার সেই অহিংস ও শান্তিকে বিকৃত করে সংসদে উপস্থাপন করার চেষ্টা হচ্ছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে অনেক অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা হয়নি। তার মানে এই নয় যে সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ সরে গেছে।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online