বাইরে থেকে দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ ট্রাকের মতো। তবে ট্রাকের ভিতরেই নাকি লুকনো রয়েছে চুল্লি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত রাশিয়ান সেনাদের নাকি ওই চুল্লিতে ঢুকিয়েই ‘ভ্যানিশ’ করছে ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনী। ট্রাক তো নয়, এ যেন একএকটি চলমান শ্মশান! সাঁজোয়া গাড়ি বা অস্ত্রশস্ত্র-গোলাবারুদ ছাড়াও বিশেষ ভাবে তৈরি এ ধরনের অসংখ্য ট্রাক নিয়ে ইউক্রেনে ঢুকেছে পুতিনবাহিনী। এমনই দাবি করেছে ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ একাধিক পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম।
পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সালে প্রথম বার নেটমাধ্যমে ওই ‘চলমান শ্মশান’-এর ছবি ভেসে উঠেছিল। বৃহস্পতিবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতে তা ফের নেটমাধ্যমে ঘোরাঘুরি করছে। যুদ্ধবিশারদদের একাংশের অভিযোগ, রাশিয়ান সেনাদের দেহ ওই জ্বলন্ত চুল্লিতে ঢুকিয়ে যুদ্ধে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যাতেও গরমিল করছে পুতিন সরকার। অভিযোগ, পুতিনবাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের দেহও পোড়ানো হচ্ছে তাতে।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বর্হিবিশ্বের পাশাপাশি রাশিয়ার অন্দরেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরই দেশের বহু নাগরিক। এ বার ‘চলমান শ্মশান’-এর ছবি নিয়ে নেটমাধ্যমে শোরগোল হওয়ার পর সরব হয়েছেন রাশিয়ার বহু সেনার মায়েরাও। রাশিয়ার সেনানিদের মায়েদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির দাবি, তাঁদের ছেলেদের ঠকিয়ে ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল, ইউক্রেন সীমান্তে তাঁদের সামরিক মহড়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে সেখানে যাওয়ার পর সরাসরি তাঁদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।
১৯৮৯ সালে গঠিত ওই কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান আন্দ্রেই কুরোচকিনের দাবি, ‘‘গোটা রাশিয়া থেকে আমরা অসংখ্য মায়ের ফোন পাচ্ছি। তাঁরা কাঁদছেন। তাঁদের ছেলেরা বেঁচে রয়েছে কি না, তা জানেন না তাঁরা।’’ কুরোচকিনের আরও দাবি, ইউক্রেনে নিয়ে যাওয়ার পর বহু রাশিয়ান সেনার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি, যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে লড়াই করার চুক্তিতে রাজি না হলে তাঁদের উপর শারীরিক অত্যাচারও চলছে।
কুরোচকিনের মতে, ‘‘যুদ্ধ হলে তাতে পেশাদারেদেরই পাঠানো উচিত। এ ধরনেই সদ্য সেনায় যোগ দেওয়া ছেলেদের নয়।’’ তাঁর দাবি, রাশিয়ার বহু সেনাকে কয়েদির মতো করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে বিপর্যয়ই ডেকে আনবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন তিনি। ‘চলমান শ্মশানে’র ছবি আবারও প্রকাশ্যে আসতে পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে ব্রিটেন। সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেশ বলেন, ‘‘আমি যদি রাশিয়ার সেনা হতাম এবং জানতাম যে সেনানায়কদের আমার প্রতি কোনও আস্থাই নেই, তাই যুদ্ধের ময়দানে পিছনে একটি চলমান শ্মশানও পাঠানো হয়েছে, তবে অত্যন্ত চিন্তান্বিত হতাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই সেনার মা-বাবা হলেও চিন্তা হত। কারণ যুদ্ধের ময়দানে চলমান শ্মশান পাঠানোর অর্থ, যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির মতো বিষয়টিই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
গোটা বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও ভাবছে রাশিয়ান সেনানিদের মায়েদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি। রাশিয়ার চিফ মিলিটারি প্রসিকিউটর-এর কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাতে চায় তারা। রাশিয়ার অন্দরে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হলেও দমতে রাজি নন পুতিন। সরকারি সূত্রের দাবি, ইউক্রেনীয় বাহিনীকে রাজধানী কিভে চারদিক দিয়ে ঘিরে ধরতে পরিকল্পনা করছেন তিনি। যাতে যুদ্ধের এক সপ্তাহের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করে ইউক্রেনীয় বাহিনী। সুত্র: আনন্দবাজার।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online