দুই মাস আগে মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাসা থেকে নিখোঁজ হন কলেজছাত্রী ইয়াশা মৃধা সুকন্যা। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার। এ ঘটনায় তার ছেলেবন্ধু ইশতিয়াক নামের এক তরুণ বর্তমানে কারাগারে থাকলেও মেয়েটির খোঁজ নেই।
শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মেয়েকে জীবিত ফেরত চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সুকন্যার মা নাজমা ইসলাম লাকী। এ সময় তিনি জানান, পরীক্ষার পর কলেজ থেকে বেরিয়ে ইশতিয়াক নামে এক তরুণের সঙ্গে চলে যায় সুকন্যা। কিন্তু কলেজ থেকে তিনি কীভাবে বের হলেন- এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই।
সংবাদ সম্মেলনে নাজমা জানান, সবসময় নিজেই মেয়েকে নিয়ে কলেজে যাতায়াত করতেন। গত ২৩ জুন মডেল টেস্ট পরীক্ষা জন্য মেয়েকে নিয়ে যান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুকন্যা কলেজে ঢোকেন। এ সময় নাজমা কলেজের বাইরেই অন্যান্য অভিভাবকদের সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকেন। নির্ধারিত সময় পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর অন্যান্য ছাত্রীরা কলেজ থেকে বের হয়ে এলেও সুকন্যার দেখা মেলেনি।
নাজমা বলেন, সুকন্যার বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে পারেনি। পরে আমি বিকেল ৪টার দিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, সুকন্যা পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল। পরে আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মেয়েকে পাইনি। তার মোবাইল আমার কাছে ছিল। আমি সেটি চেক করে ইশতিয়াক নামে একটি ছেলের সঙ্গে তার কথোপকথন পাই। এরপর রমনা থানায় গিয়ে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন নাজমা। পুলিশ সুকন্যার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ইশতিয়াকের নম্বর নিয়ে ফোন করে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দেওয়া কলে ফোন রিসিভ করে ইশতিয়াকের বড় ভাই। পুলিশ তাকে বিষয়টি জানিয়ে ইশতিয়াককে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসতে বলে। এর পর থেকে কখনও নম্বরটি বন্ধ করে রাখা হচ্ছিল; আবার কখনও চালু করা হচ্ছিল।
নাজমা বলেন, সেদিন রাত পৌনে নয়টার দিকে আমার মোবাইলে সুকন্যার ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ আসে- ‘মা আমি বাসায় আসছি তুমি চিন্তা করো না’। পরে আমি জানতে পারি মেসেজটি আমার মেয়ের নয়, ইশতিয়াক পাঠিয়েছে। রাত পৌনে ১১টার দিকে পুলিশ আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আপনি মগবাজার বটতলায় আসুন। আপনার মেয়েকে নিয়ে ইশতিয়াক আসছে। কিন্তু সে আসেনি। রাত সাড়ে ১১টায় আমার ফোনে কল আসে। ইশতিয়াক আমাকে বলে, আন্টি সুকন্যা কী বাসায় ফিরেছে? আমি তাকে বলি, কীভাবে ফিরবে সে তো তোমার সঙ্গে আছে। এ কথা বলে আমি ফোনটি পুলিশকে দিই। পুলিশ ইশতিয়াককে বলে সুকন্যাকে নিয়ে আসতে, নয়তো ভালো হবে না। ইশতিয়াক ২০ মিনিটের কথা বলে আর আসেনি, নিজের নম্বরটিও বন্ধ করে দেয়।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ জুন সকালে পুলিশ ইশতিয়াককে থানায় ডাকে। সে তার বন্ধু সালমানকে নিয়ে আসে। আমি এ সময় তাকে বার বার সুকন্যার কথা জিজ্ঞেস করি। বলি, বাবা তুমি আমার মেয়েকে কী করেছ? মেরে ফেলেছো? ইশতিয়াক বলে, না আন্টি মারব কেন? তখন আমি জিজ্ঞেস করি, সুকন্যাকে কী অন্য কারও কাছে দিয়ে দিয়েছো? সে মাথা নিচু করে রাখে। এ সময় আমার ফেসবুকে মেসেজ পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে ইশতিয়াক। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, ২৩ জুন সারাদিন সুকন্যা তার সঙ্গে ছিল। রাত ৮টায় তাকে রিকশায় তুলে দেয়। সারাদিন কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন- পুলিশের এ প্রশ্নের উত্তরে ইশতিয়াক ওয়ারীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁর কথা জানায়। কিন্তু রেস্তোরাঁগুলোয় নিয়ে গেলে জানায়, সে এখানে আসেনি।
একই দিন বিকেলে গ্রেফতার হয় ইশতিয়াকের বন্ধু সালমান। নাজমা বলেন, পরে জানতে পারি সুকন্যাকে নিয়ে ইশতিয়াক গেণ্ডারিয়ার একটি শশ্মান ঘাটে যায়। গেণ্ডারিয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সুকন্যা ও আরেকটি ছেলে এক রিকশায়। আমার মেয়ের হাতে মোবাইল, সে কথা বলছিল। রিকশা থামিয়ে পিছনের দিকে তাকাচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের দুই রিকশা পরে ইশতিয়াককে দেখা যায়। পুলিশকে বলা হয়েছে, সামনের সিসিটিভির ফুটেজগুলো বের করার জন্য কিন্তু তারা করেনি।
নাজমা ইসলাম লাকী বলেন, কোনো কিছু আমরা জানতে পারিনি। পুলিশ আমাদের পাঁচদিন থানায় শুধু বসিয়ে রেখেছে। বলেছে, তদন্ত করছি আপনারা বসে থাকেন। ইশতিয়াক আমাকে একটা কথাই বলেছে, আন্টি আপনার মেয়ে চলে আসবে কিন্তু আজও আমার মেয়ে আসেনি। ইশতিয়াক এখন কারাগারে আছে।
তিনি বলেন, পুলিশের কাছে তেমন সাহায্য না পেয়ে আমরা গত ১৯ জুলাই মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর করি। মামলার তদন্ত দায়িত্ব পায় ডিবির রমনা বিভাগ। সেখানকার সদস্যরা আমাদের কাছ থেকে সব তথ্য নেয়। কিন্তু গত ১ মাস ২৭ দিন ধরেও মেয়ের কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আমরা কারও কাছে কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। ডিবি এবং পুলিশ একই কথা বলছে। আমি শুধু আমার মেয়েটাকে ফিরে পেতে চাই। ডিবি সদস্যরা বার বার বোঝাতে চাচ্ছেন আমার মেয়ের মাথায় সমস্যা। কেন বলছে আমি জানি না। আমি শুধু আমার মেয়েকে ফেরত পেতে চাই।
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি আমাদের কাছে ছিল। তবে, সেটি ডিবিতে হস্তান্তর করিয়েছেন নিখোঁজ ছাত্রীর পরিবার। মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে। মামলার তদন্তকারী ডিএমপির গোয়েন্দা রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস জানান, গেণ্ডারিয়ার সিসিটিভি ফুটেজ আমরা পরীক্ষা করেছি। উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য নেই। আমরা এখনও তদন্ত জারি রেখেছি।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online