মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের শ্রীনদী গ্রামের চা বিক্রেতা হাবীব ব্যাপারীর একমাত্র ছেলে রফিকুল ব্যাপারী। অন্যসব যুবকের মতো তারও সপ্ন ছিলো একটি সুন্দর সচ্ছল জীবনের। আর তাই তো ধার-দেনা, সুদ ও বসতভিটা ২৭ লাখ টাকায় বন্ধক রেখে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। চোখে-মুখে ছিল রঙিন স্বপ্ন। তবে গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় ইতালি থেকে মুঠোফোনে খবর আসে রফিকুল বেপারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ভেঙে যায় স্বপ্ন। রফিকুলের মৃত্যুর সংবাদে পরিবারে শোকের মাতম চলছে। পরিবারের একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মা-বাবা।
এসময় আহাজারিতে রফিকুলের বাবা হাবিব ব্যাপারী বলেন, আমার ছেলে রফিকুলকে গত ফেব্রুয়ারিতে ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী ধুরাইল ইউনিয়নের হোসেনেরহাট এলাকার দালাল আলমগীর খা। এ সময় দালাল আলমগীরকে আমি সাড়ে ৯ লাখ টাকা দেই। পরে মাফিয়া দিয়ে ধরিয়ে আমার কাছ থেকে আরো ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তারপরও আমার ছেলেকে লিবিয়া থেকে ইতালিতে নিতে পারেনি। পরে আমি কুদ্দুস নামে অন্য এক দালালের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ইতালি পাঠনোর ব্যবস্থা করি। আলমগীর দালালের লোকেরা আমার ছেলেকে শারীরিক নির্যাতন করে। এতে করে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থ অবস্থায় ইতালি পৌঁছানোর পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আমি এর বিচার চাই।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালের ভর্তির পর ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। সেই সময় রফিকুল বলেছিল, আব্বা আমিও মরলাম তোমাগোও মাইরা গেলাম! এরপর আর কথা হয়নি।তবে ঘটনার পর আলমগীর দালাল গা ঢাকা দিয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে তাকে তার বাড়িতে খুঁজতে গেলে পাওয়া যায়নি। মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছেলেকে হত্যার দায়ে মায়ের দশ বছর কারাদণ্ড
পঞ্চগড়ে তালাক প্রাপ্ত হয়ে বাসায় এসে চারদিনের মাথায় নিজের ছেলে শিশুকে বালিশ চাপা দিয়ে ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হত্যা করেছিল মা হামিদা আক্তার (২২)। নিহত শিশু হলেন তেঁতুলিয়া উপজেলার আক্তারুল হকের আট মাস বয়সী শিশু ইমরান হাসান। ওই বছরের ০৮ এপ্রিল তালাক প্রাপ্ত হয়ে বাসায় এসেছিলেন হামিদা। ঘটনাটি আটোয়ারি উপজেলার দোহশুহ গ্রামে। পরে শিশুটির চাচা মজনু হক বাদী হয়ে হামিদা আক্তার (২২) ও তার মা খোদেজা বেগম (৪৫) এবং হামিদার বাবা হাসান আলী (২৮) বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
আজ বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে সেই মামলার রায়ে মা হামিদা আক্তারকে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। একই সাথে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। এ সময় অপর দুই আসামি খোদেজা বেগম এবং হাসান আলীকে খালাস প্রদান করা হয়।
মামলার বিবরন ও আদালত সুত্র জানায়, আটোয়ারি উপজেলার দোহসুহ গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলীর মেয়ের সাথে তেঁতুলিয়া উপজেলার লতিফগঞ্জ এলাকার আক্তারুল হক (২৮) বিয়ের দুই বছরের মাথায় পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী হামিদা আক্তারকে খোলা তালাক দেন। ২০১৭ সালে ৮ এপ্রিল তালাকপ্রাপ্ত হামিদা আক্তার আট মাস বয়সী ছেলে ইমরান হাসানকে নিয়ে আটোয়ারি উপজেলার দোহসুহ গ্রামে তার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। এর চারদিন পর ১২ এপ্রিল দুপুরে হামিদা আক্তারের বাবার বাড়িতেই শিশু হাসানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত শিশুর চাচা মো. মজনু হক বাদী হয়ে হামিদা আক্তার এবং তার বাবা হাসান আলী ও মা খোদেজা বেগম (৪৫) কে আসামী করে আটোয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে নিহত শিশুটির মা হামিদা আক্তারকে প্রধান অভিযুক্ত করে তিজনের নামে ওই বছরের ১৬ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন এবং দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত হামিদা আক্তার তার আট মাস বয়সী ছেলের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে স্বাশরোধ করে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন। বুধবার আদালতের এজলাসে প্রধান আসামী হামিদা আক্তারের উপস্থিতিতে আদালতের বিচারক এই দন্ডাদেশ দেন। অপর দুই আসামী হামিদা আক্তারের মা ও বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় বিচারক তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মামলার প্রধান আসামী হামিদা আক্তার তার আট মাস বয়সী ছেলের মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করেন। অভিযোগটি আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয় এবং এক পর্যায়ে হামিদা আক্তার আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেন। বিজ্ঞ আদালত প্রধান আসামীকে ১০ বছর সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেন। একই রায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online