ফারদিনের আত্মহত্যা নিয়ে তদন্তকারীর তথ্যপ্রমাণ বিশ্বাসযোগ্য নয়: দাবি বাবার

এবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের আত্মহত্যা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি করেছে তার পরিবারের লোকজন। ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বলেছেন, ‘ফারদিনের আত্মহত্যার বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা যে তথ্যপ্রমাণ দেখিয়েছে সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। তদন্তকারী সংস্থা আমাদের পরিবারের দেওয়া কোনো তথ্য প্রমাণ আমলে নেয়নি।’

গতকাল বুধবার ১৪ ডিসেম্বর র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির সদর দপ্তরের মুখপাত্র (মিডিয়া পরিচালক) কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ফারদিন স্বইচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছেন। একই কথা জানিয়েছে, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‍্যাব)। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার ১৫ ডিসেম্বর ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা তার প্রতিক্রিয়া জানান।

এর আগে গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন বলেন, ফারদিনকে কেউ হত্যা করেনি সে নিজের ইচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছে। আমরা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছি সেগুলো বিশ্লেষণ করে কাজ করা হচ্ছে এবং এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আমরা বিভিন্ন আলামত দিয়েছি।

এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১৫ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। সোমবার ১২ ডিসেম্বর মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মজিবুর রহমান প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেননি।

এজন্য ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক প্রতিবেদন দাখিলের এ তারিখ ঠিক করেন। নিখোঁজের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে গত ৭ নভেম্বর রাতে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

‘৩০ বছরের বেশি বাঁচার দরকার নেই’, বন্ধুকে বলেছিলেন ফারদিন

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধারের পর ধারণা করা হচ্ছিলো তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার।

দীর্ঘ ৩৮ দিনের তদন্ত শেষে তদন্তকারী সংস্থা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, নিখোঁজ হওয়ার আগে ফারদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একা একাই ঘুরে বেড়িয়েছেন।, বন্ধুকে বলেছিলেন ফারদিন। ফারদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, হতাশা থেকে তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

এরমধ্যে ডিবির তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) ডিবি কার্যালয়ে আসেন বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী। প্রায় তিন ঘণ্টা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ শেষে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ডিবির তদন্তে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন। ডিবির কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত দেখে এগুলো প্রাসঙ্গিক বলে দাবি করেন তারা।

ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছি। বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাখ্যা দিয়েছি। কিন্তু তার সঙ্গে কেউ ছিলেন না, তিনি একা একাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন।

হারুন অর রশীদ বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর একপাশে তিনি নামেন। কিন্তু তিনি চনপাড়ার দিকে যাননি, সেখানে কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ঘটনার ৩৮ দিন তদন্ত শেষে এটিকে আমরা সুইসাইডাল ঘটনা বলেছি। এ বিষয়ে বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে তিন ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা তার পরিবার, বন্ধু-আত্মীয়দের বলেছি, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।

ডিবি প্রধান আরও বলেন, ফারদিন সেদিন রাতে বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যান। অথচ গত দুই বছরেও তিনি এসব এলাকায় যাননি। ফারদিন দুই বছরে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছেন, আমরা সবার কাছে খোঁজ-খবর নিয়েছি।

ফারদিন বিভিন্ন নোবেল বই পড়তেন উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হতাশার কথা বলেছেন। এক বান্ধবীকে লিখেছেন—‘৩০ বছরের বেশি কারো বাঁচার দরকার নাই’। আবার কাউকে লিখেছেন—‘যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ কষ্ট পাবে’। আরেকজনকে লিখেছেন—‘কোন একদিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি আত্মহত্যা করেছি’। ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন শুক্রবারেই।

ডিবি প্রধান বলেন, ফারদিনের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া ফারদিনের মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধস্তাধস্তির আলামত নেই। তার মোবাইল-টাকা পকেটে ছিল। হাতে ঘড়ি ছিল, কোনকিছু খোয়া যায়নি। বুয়েটের ৪০ শিক্ষার্থীও এসব আলামত দেখে একমত পোষণ করেছেন।

Check Also

Health for Life Nutrition A Guide to Living Well

Health for Life Nutrition A Guide to Living Well

In today’s fast-paced world, maintaining good health can seem overwhelming. But the truth is, a …