হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া আগামী দুদিন (শনিবার ও রোববার) চট্টগ্রাম বিভাগের সব নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে নদ-নদীর পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, ফেনী ও গোমতী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশে এবং উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দুদিন চট্টগ্রাম বিভাগের সব নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে- বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী দুদিন উপকূলীয় অঞ্চলে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীর পানি সমতল বাড়তে পারে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী তিনদিন পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। পরবর্তী দুদিন পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী তিনদিন পর্যন্ত এসব নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং অন্য প্রধান নদী- মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ধলাইর পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। যা আগামী তিনদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
তলিয়ে গেছে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা
টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণের কারণে তলিয়ে গেছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা। পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালামাল। শত শত ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বহু মানুষ।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের পর্যটন জোনের কলাতলী, প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, টেকপাড়া, বাস টার্মিনাল, কালুরদোকান, বৌদ্ধমন্দির সড়কসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে শহরের যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন অসংখ্য মানুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হলেও ভারী বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণ পুরো শহরের আট লাখ মানুষের কর্মজীবন অনেকটাই থামিয়ে দেয়। এমন ভারী বর্ষণ গত ৫০ বছরে দেখেননি কেউ।
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, এমন ভারী বর্ষণ এ জীবনে তিনি দেখেননি। বর্ষণে পর্যটন শহরের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
শহরের পাহাড়তলী বৈইল্লা পাড়ার বাসিন্দা বাবুল বড়ুয়া জানান, টানা বর্ষণে পাহাড়তলীর তিনটি সড়ক ডুবে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি ও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে নারী-শিশুরা চরম দুর্ভোগ আছে।
পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়া, বন্দরপাড়া, উত্তর নুনিয়াছটার কয়েকশ’ ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ খাবার ও পানীয় জল সংকটে আছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন পর্যটকরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব বিরাজ করে। পাহাড় কাটার কারণে সে মাটি বৃষ্টির পানিতে নিচের দিকে নেমে পানি চলাচলের নালা ভরাট হয়ে গেছে। ফলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। গত জুলাই মাসেও কয়েক দফায় ভারী বর্ষণে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছিল।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গনি ওসমানী বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের শতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে যারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরসমূহে ঝোড়ো হাওয়া বইয়ে যেতে পারে। কক্সবাজারসহ চার সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে- বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
অন্যদিকে ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কা বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে শুক্রবার ভোররাতে কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ ডিককুল এবং উখিয়ার হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পাহাড়ধসের পৃথক ঘটনায় দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
Sotto TV We Publish technology, various types of tips, career tips, banking information, methods of earning online