সবসময় চেয়েছি নিজের পরিবারকে সময় দিতে, এখন সেটাই করছি: পূর্ণিমা

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘পূর্ণিমা’ নামটি শুধু একটি জনপ্রিয় অভিনেত্রীর পরিচয় নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক সময়ের আবেগ, ভালোবাসা এবং সিনে-নস্টালজিয়ার প্রতীক। দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময়জুড়ে চলা তাঁর অভিনয়জীবন শুধু সিনেমা নয়, ছুঁয়ে গেছে কোটি ভক্তের হৃদয়।

১৯৮৪ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জন্মগ্রহণ করেন দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। সেই আগ্রহ, স্বপ্ন আর মায়ের উৎসাহ থেকেই মাত্র ১৪ বছর বয়সে নাম লেখান চলচ্চিত্রে। ১৯৯৮ সালের ১৫ মে, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ সিনেমার মাধ্যমে রিয়াজের বিপরীতে তাঁর বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। সেই শুরু, তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

পূর্ণিমার প্রথম ব্যবসাসফল সিনেমা ছিল ‘যোদ্ধা’। এরপর একে একে তাঁর ঝুলিতে জমতে থাকে জনপ্রিয় সব ছবি– ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘সুলতান’, ‘পিতা মাতার আমানত’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘বিয়ের প্রস্তাব’, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’, ‘শাস্তি’, ‘সুভা’, ‘মনের মাঝে তুমি’ এবং আরও অসংখ্য। অভিনয়ের নৈপুণ্যে তিনি একদিকে যেমন বাণিজ্যিক সিনেমায় দাপট দেখিয়েছেন, তেমনি সংলাপহীন চরিত্রেও সমান সাবলীল ছিলেন।

নায়ক রিয়াজ, মান্না, রুবেল, ফেরদৌস, শাকিব খান, আমিন খান, অমিত হাসানসহ সমসাময়িক প্রায় সব তারকার বিপরীতে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছেন তিনি। শুধু সিনেমা নয়, নাটকেও তিনি রেখে গেছেন শক্ত উপস্থিতি। শহীদুজ্জামান সেলিম, আফজাল হোসেন, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, মাহফুজ আহমেদ, অপূর্ব প্রমুখের সঙ্গে তাঁর কাজ প্রশংসিত হয়েছে।

পূর্ণিমার ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য এক অর্জন হলো কাজী হায়াত পরিচালিত ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন। আবার নায়ক রাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘সন্তান যখন শত্রু’ ও আরেকটি সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তার জীবনে স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি বলেন, রাজ্জাক আঙ্কেল আমাকে যে ড্রাইভ দিয়েছিলেন, সেটা আজও আমার মেরুদণ্ড হয়ে আছে।”

তবে পূর্ণিমার এই দীর্ঘ অভিনয়জীবন ছিল না কেবল সাফল্যের সোনালি গল্প। মাঝেমধ্যে হতাশাও গ্রাস করেছিল তাকে। এক পর্যায়ে নিজেকে গুটিয়ে নেন, অভিনয় থেকে খানিকটা দূরত্ব তৈরি হয়। তবে হাল ছাড়েননি। উপস্থাপনায় এসে আবার আলোচনায় আসেন। নিজের অবস্থান পুনরুদ্ধার করেন। তার কথায়, ুএকটা সময় এসে আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু দর্শকদের ভালোবাসা আর মায়ের প্রেরণায় আবার ঘুরে দাঁড়াই।”

পূর্ণিমা বলেন, আমি আজীবন আমার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। তিনি তাগিদ না দিলে আমি কখনো অভিনয়ে আসতাম না, পূর্ণিমা হয়ে উঠতাম না। আজ আমি যে, মা-ই তার মূল কারিগর।”

পূর্ণিমা বর্তমানে অভিনয় থেকে অনেকটাই দূরে। সংসার, সন্তান এবং ব্যক্তিগত জীবনেই তার মূল ব্যস্ততা। তিনি এখনো মাঝেমধ্যে বিশেষ কিছু কাজ করেন, তবে সংখ্যায় খুবই সীমিত। ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আহারে জীবন’ তার সর্বশেষ বড় পর্দার সিনেমা। তবে পূর্ণিমা ভক্তরা এখনো আশায় বুক বাঁধেন, আবার একদিন বড় পর্দায় দেখা মিলবে তাদের প্রিয় নায়িকার।

পূর্ণিমার জন্মদিনে তিনি থাকছেন পরিবারের সঙ্গেই। দিনটিকে তিনি উদযাপন করবেন ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে, নিরিবিলিতে। এ প্রসঙ্গে পূর্ণিমা বলেন, এই দিনটি আমার জীবনের একটি নতুন অধ্যায়। সবসময় চেয়েছি নিজের পরিবারকে সময় দিতে, এখন সেটাই করছি।”

Check Also

এক টুকরো কাপড়ের জন্য আমাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিচ্ছে: মুসকান

ভারতের কর্নাটকের মাণ্ড্য প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজ প্রাঙ্গনের একটি ভিডিও নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, হিজাব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *